কিছু ম্যাচ শুধু জয়-পরাজয়ের গল্প বলে না, বরং একেকটা নাটক হয়ে ওঠে। ২০২৫ আইপিএলের ১৪তম ম্যাচে গুজরাট টাইটানস একেবারে একপেশে খেলায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে ৮ উইকেটে হারিয়ে দিল। কিন্তু এ শুধু একটা জয় ছিল না—এখানে প্রতিশোধ ছিল, রেকর্ড ভাঙার উচ্ছ্বাস ছিল, আর ছিল এক দুর্দান্ত রান তাড়ার গল্প!
সিরাজের মিশন: পুরোনো দলের বিপক্ষে জবাব
এই ম্যাচটা মোহাম্মদ সিরাজের জন্য অন্যরকম ছিল। এক সময় আরসিবির ভরসা ছিলেন, এবার এলেন গুজরাট টাইটানসের হয়ে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। মুখে কিছু বলার দরকার হয়নি, বল নিজেই সব বলে দিল!
সিরাজ মাত্র ১৯ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট, একাই গুঁড়িয়ে দিলেন আরসিবির টপ অর্ডার। প্রথম শিকার হলেন দেবদত্ত পাড়িক্কল, এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরত গেলেন। তারপর এলেন ফিল সল্ট—তাঁর ভাগ্যও একই! সিরাজের প্রতিটা বল যেন একটা মিশন, প্রতিটা উইকেটের পর উদযাপন যেন হারানো রাজ্য ফিরে পাওয়ার আনন্দ।
শুধু পরিসংখ্যান নয়, এই স্পেলের আসল সৌন্দর্য ছিল এর আবেগে। অনেকেই বলেন, সিরাজ সবসময় ধারাবাহিক নন, কিন্তু আজ যেন তিনি নিজেকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। গুজরাট যে তাঁকে নিয়ে বাজি ধরেছিল, সেটা দারুণভাবে কাজে লেগেছে!
বাটলারের ঝড়ো ইনিংস: সহজ করে দিল ম্যাচ
১৭০ রান তাড়া করা সব সময় সহজ না। কিন্তু যখন নামটা জস বাটলার, তখন যে কোনো বোলিং লাইনআপ কাঁপতে বাধ্য! মাত্র ৩৯ বলে ৭৩ রানে অপরাজিত থেকে গুজরাটকে দারুণ এক জয় এনে দিলেন তিনি।
বাটলার তাঁর ফিফটি করলেন নিজের চেনা ঢঙে—লিয়াম লিভিংস্টোনকে ছক্কায় উড়িয়ে! প্রতিটি শট ছিল দুর্দান্ত, প্রতিটি বাউন্ডারি যেন পরিকল্পনা করেই মারা। কখনো আগ্রাসী, কখনো ঠান্ডা মাথায়, কখনো ধ্বংসাত্মক, কখনো সুনিপুণ—এই কারণেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাটলার এত ভয়ঙ্কর।
সাই সুদর্শনের (৪৯*) সঙ্গে মিলে নিশ্চিত করলেন, ম্যাচ যেন এক মুহূর্তের জন্যও হাতছাড়া না হয়। এভাবে ব্যাট করলে গুজরাটকে হারানো সহজ হবে না!
লিভিংস্টোন একাই লড়লেন, কিন্তু লাভ হলো না
যেখানে পুরো আরসিবি দলের জন্য ম্যাচটা হতাশার, সেখানে লিয়াম লিভিংস্টোন ছিলেন একমাত্র আশার আলো। একদম ধসে পড়া ইনিংসে একাই দাঁড়িয়ে করলেন ৫৪* রান।
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে যখন তিনি সেট হয়ে গেলেন, তখন থামতেই চাইছিলেন না! বিশেষ করে রশিদ খানের এক ওভারে টানা তিন ছক্কা—পুরো চিন্নাস্বামী তখন উল্লাসে ফেটে পড়েছে!
কিন্তু ক্রিকেট যে কখনো কখনো নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে! লিভিংস্টোন একা যতই লড়ুন, সঙ্গ না পেলে লাভ কী? তাঁর লড়াকু ইনিংসটা শেষ পর্যন্ত বৃথাই গেল, কারণ গুজরাটের বোলাররা পুরো ম্যাচেই আরসিবিকে চেপে ধরে রেখেছিল।
এই জয় শুধু একটা জয় না—এটা ছিল এক দারুণ স্টেটমেন্ট! সিরাজ: পুরোনো দলের বিপক্ষে ফিরে জবাব দিলেন স্টাইলে। বাটলার: নিখুঁত রান তাড়ার মাস্টারক্লাস দেখালেন। এই ম্যাচে সব ছিল—আবেগ, প্রতিশোধ, রোমাঞ্চ, আর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গুজরাট টাইটানস কি এই ফর্ম পুরো টুর্নামেন্টে ধরে রাখতে পারবে? যদি এমন খেলতে থাকে, তাহলে এদের থামানো কঠিন হবে! আপনি কী ভাবেন?