আইসিসি নারী টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ একটি দুর্দান্ত ও উত্তেজনাপূর্ণ টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে, যেখানে বিশ্বের শীর্ষ সব নারী প্রতিভা একত্রিত হবে। দশটি দল এই মর্যাদাপূর্ণ আসরে লড়াই করবে, এবং এই প্রতিযোগিতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এখন এই অত্যাবশ্যক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ও তাদের রেকর্ড হাইলাইট করা হবে যারা এই প্রতিযোগিতায় নজর কাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। অভিজ্ঞ থেকে উঠতি তারকা খেলোয়াড়রা তাদের নিজ নিজ দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
১. অ্যালিসা হিলি (অস্ট্রেলিয়া নারী)
- ম্যাচ: ১৫৯
- রান: ২৯৮৭
- সর্বোচ্চ স্কোর: ১৪৮*
- ব্যাটিং গড়: ২৫.৩১
- স্ট্রাইক রেট: ১২৯.৪৭
- ৫০/১০০: ১৭/১
অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেট দলের একটি স্তম্ভ, অ্যালিসা হিলি তার আক্রমণাত্মক এবং নির্ভীক ব্যাটিং শৈলীর জন্য পরিচিত। আইসিসি নারী টি২০ বিশ্বকাপ ২০২০-এ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার অপরাজিত ১৪৮ রানের ইনিংস এখনও নারী টি২০ ক্রিকেট ইতিহাসের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। হিলির পাওয়ারপ্লে-তে আধিপত্য এবং ১২৯.৪৭ স্ট্রাইক রেট- যা তাকে আসরে নজর কেড়ে নেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে তুলে ধরবে। অস্ট্রেলিয়া নারী, ক্রিকেটে একটি শক্তিশালী দল, এবং আবারও তারা তাদের শিরোপা রক্ষার জন্য হিলির বিস্ফোরক ব্যাটিং এর উপর নির্ভর করবে।
২. মাইয়া বাউচিয়ার (ইংল্যান্ড নারী)
- ম্যাচ: ৩৫
- রান: ৫৩৮
- সর্বোচ্চ স্কোর: ৯১
- ব্যাটিং গড়: ২৩.৩৯
- স্ট্রাইক রেট: ১২১.৭১
- ৫০/১০০: ২/০
মাইয়া বাউচিয়ার, ইংল্যান্ড এর ব্যাটিং লাইনআপের একটি উঠতি তারকা, তিনি ধারাবাহিকতা এবং অভিযোজনের জন্য দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। যদিও তার নামের পাশে এখনও একটি টি২০ শতক নেই, তবে তার ১২১.৭১ স্ট্রাইক রেট এবং সর্বোচ্চ স্কোর ৯১ প্রমাণ করে যে তিনি বড় ইনিংস খেলতে সক্ষম। এই নারী টি২০ বিশ্বকাপ-এ মিডল অর্ডারে গুরুত্বপূর্ণ স্থিতিশীলতা প্রদানের জন্য ইংল্যান্ড তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
৩. দয়ালান হেমালতা (ভারত নারী)
- ব্যাটিং রেকর্ড: ম্যাচ – ২৩, রান – ২৭৬, সর্বোচ্চ স্কোর – ৪৭, ব্যাটিং গড় – ১৬.২৩, স্ট্রাইক রেট – ১১১.৭৪
- বোলিং রেকর্ড: ম্যাচ – ২৩, উইকেট – ৯, সেরা বোলিং – ৩/১৫, ইকোনমি – ৬.৪৯, বোলিং গড় – ১৪.৬৬
দয়ালান হেমালতা ভারতের প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটিং অলরাউন্ডার, যে দলে ভারসাম্য বজায় রাখবে। যদিও তার ব্যাটিং পরিসংখ্যান বলে দেয় যে তিনি ব্যাটিংয়ে একটি ছাপ রাখতে চান, তবে তার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নেওয়ার ক্ষমতাকে উপেক্ষা করা যায় না। তার ৩/১৫ সেরা বোলিং পরিসংখ্যান, বল হাতে ম্যাচ পরিবর্তনের ক্ষমতা দেখায়। ভারত তাদের প্রথম নারী টি২০ বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যে হেমালতার অলরাউন্ড নৈপুণ্যতার উপর নির্ভর করবে।
৪. সোফি ডিভাইন (নিউজিল্যান্ড নারী)
- ব্যাটিং রেকর্ড: ম্যাচ – ১৩৭, রান – ৩২৭৭, সর্বোচ্চ স্কোর – ১০৫, ব্যাটিং গড় – ২৮.২৫, স্ট্রাইক রেট – ১২৫.৪৬
- বোলিং রেকর্ড: ম্যাচ – ১৩৭, উইকেট – ১১৭, সেরা বোলিং – ৪/২২, ইকোনমি – ৬.৫৬, বোলিং গড় – ১৮.৮৪
সোফি ডিভাইন নারী ক্রিকেট এর একটি শক্তি এবং নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের ধারাবাহিক পারফর্মারদের মধ্যে একজন। তিনি সত্যিকারের একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার, কেননা তার ব্যাট এবং বল উভয়ই ম্যাচ জয়ের ক্ষমতা রাখে। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শৈলী, এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা তাকে আসরে নজর কেড়ে নেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। নিউজিল্যান্ড যদি এই টুর্নামেন্টে এগিয়ে যেতে চায় তবে ডিভাইন কৌশলগতভাবে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
৫. তাজমিন ব্রিটস (দক্ষিণ আফ্রিকা নারী)
- ম্যাচ: ৫৭
- রান: ১৩৮৫
- সর্বোচ্চ স্কোর: ৮১
- ব্যাটিং গড়: ৩১.৪৭
- স্ট্রাইক রেট: ১০৬.২১
- ৫০/১০০: ১২/০
তাজমিন ব্রিটস দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। তার ৩১.৪৭ গড় তার ধারাবাহিকতা প্রতিফলিত করে, এবং তার নামের পাশে ১২ অর্ধশতক রয়েছে, যা তাঁকে নির্ভরযোগ্য শীর্ষ-অর্ডার ব্যাটার হিসেবে চিহ্নিত করে। ব্রিটস এর স্থিতিশীলভাবে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা এবং দুর্দান্ত স্ট্রাইক রেট দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বিশেষ করে চাপের পরিস্থিতিতে তাকে একটি অপরিহার্য খেলোয়াড় করে তুলবে।
৬. হেইলি ম্যাথুস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী)
- ব্যাটিং রেকর্ড: ম্যাচ – ৯৩, রান – ২২৬১, সর্বোচ্চ স্কোর – ১৩২, ব্যাটিং গড় – ২৫.৬৯, স্ট্রাইক রেট – ১১২.৯৩, ৫০/১০০ – ১২/২
- বোলিং রেকর্ড: ম্যাচ – ৯৩, উইকেট – ৯৭, সেরা বোলিং – ৪/১০, ইকোনমি – ৫.৯০, বোলিং গড় – ১৭.২১
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর অধিনায়ক হেইলি ম্যাথুস ব্যাট এবং বল উভয় এর সাথে প্রমাণিত ম্যাচ-জয়ী তারকা খেলোয়াড়। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শৈলী এবং মিতব্যয়ী স্পেলে উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় করে তুলেছে। ম্যাথুস একাই খেলা পরিবর্তন করার সামর্থ্য রাখে, এবং তার নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল নারী টি২০ বিশ্বকাপ-এ দ্বিতীয়বারের ন্যায় শিরোপা অর্জনের চেষ্টায় নিমজ্জিত হবে।
আরও পড়ুন: আবহাওয়া এবং ভেন্যু: যা আইসিসি নারী টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪-এ প্রভাব ফেলতে পারে
৭. সুগন্ধিকা কুমারী (শ্রীলঙ্কা নারী)
- ম্যাচ: ৮১
- উইকেট: ৫৮
- সেরা বোলিং: ৩/১৭
- ইকোনমি: ৬.০১
- বোলিং গড়: ২৭.৯৮
সুগন্ধিকা কুমারী শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলারদের মধ্যে একজন। তার সঠিকতা এবং রান সীমাবদ্ধ করার ক্ষমতার জন্য তিনি সুপরিচিত, কুমারী প্রতিপক্ষের ব্যাটিং নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তার মধ্য ওভারে উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা শ্রীলঙ্কার এই নারী টি২০ বিশ্বকাপে সফলতার জন্য ভূমিকা রাখবে।
৮. ফাতিমা সানা (পাকিস্তান নারী)
- বোলিং রেকর্ড: ম্যাচ – ৪৩, উইকেট – ৩১, সেরা বোলিং – ৩/১৮, ইকোনমি – ৭.৪০, বোলিং গড় – ৩১.৬৭
- ব্যাটিং রেকর্ড: ম্যাচ – ৪৩, রান – ৩১৬, সর্বোচ্চ স্কোর – ৩৭*, ব্যাটিং গড় – ২৬.৩৩, স্ট্রাইক রেট – ১১৩.৬৬
ফাতিমা সানা পাকিস্তান এর একজন প্রতিশ্রুতিশীল বোলিং অলরাউন্ডার, যিনি ব্যাট এবং বল উভয় ভাবেই দলে অবদান রাখতে সক্ষম। যদিও বোলিং তার প্রধান শক্তি, তার সেরা পরিসংখ্যান ৩/১৮, তবে তিনি ব্যাটিং উন্নতির লক্ষণও দেখিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে তার রান যোগ করার ক্ষমতা পাকিস্তানের এই টুর্নামেন্ট জয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
৯. ফারিহা তৃষ্ণা (বাংলাদেশ নারী)
- ম্যাচ: ১২
- উইকেট: ১২
- সেরা বোলিং: ৪/১৯
- ইকোনমি: ৬.৮৪
- বোলিং গড়: ২০.৮৩
ফারিহা তৃষ্ণা, যদিও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন, তবে তার বোলিংয়ের মাধ্যমে তিনি সকলের নজর কেড়ে নিয়েছেন। তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৪/১৯, যা বাংলাদেশ দলের উদীয়মান প্রতিভা হিসেবে তাঁকে বিকশিত করেছে। বাংলাদেশ যদি এই টুর্নামেন্টে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয় তবে তৃষ্ণা দলের পক্ষে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করবে।
১০. ক্যাথরিন ব্রাইস (স্কটল্যান্ড নারী)
- ব্যাটিং রেকর্ড: ম্যাচ – ৪৫, রান – ১১৯৭, সর্বোচ্চ স্কোর – ৭৩*, ব্যাটিং গড় – ৩৯.৯০, স্ট্রাইক রেট – ১০৪.০৮
- বোলিং রেকর্ড: ম্যাচ – ৪৫, উইকেট – ৪৬, সেরা বোলিং – ৪/৮, ইকোনমি – ৪.৩০, বোলিং গড় – ১৩.৪৭
স্কটল্যান্ড এর অলরাউন্ডার ক্যাথরিন ব্রাইস একজন উজ্জ্বল পারফর্মার। তার ৩৯.৯০ ব্যাটিং গড় এবং ১৩.৪৭ বোলিং গড়ে উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা তাকে স্কটল্যান্ডের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় করে তুলেছে। নারী টি২০ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড তাদের প্রভাব ফেলতে ব্রাইস একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠবেন।
উপসংহার
আইসিসি নারী টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ একটি উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিযোগিতা হতে যাচ্ছে, যেখানে এই খেলোয়াড়রা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। বিস্ফোরক ব্যাটিং, খেলার পরিবর্তনকারী অলরাউন্ড পারফরম্যান্স অথবা টাইট বোলিং স্পেলের মাধ্যমে, এই ক্রিকেটাররা তাদের দলের সাফল্যের কেন্দ্রে থাকবে। বিশ্বকাপের গৌরবের জন্য তারা যখন লড়াই করবে, তখন এই প্রধান খেলোয়াড়’রা সকলের নজর কেড়ে নিবে।