Rinku Singh and Yashasvi Jaiswal. (Photo Source : BCCI/IPL)
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) যখন ২০০৮-এ শুরু হয়েছিল, তখন এই টুর্নামেন্টকে এমন এক মঞ্চ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল যেখানে ক্রিকেটাররা তাঁদের প্রতিভা তুলে ধরার সর্বোচ্চ সুযোগ পাবেন। বিগত ১৬টি মরসুমে আইপিএল প্রতিভাধর ক্রিকেটারদের সামনে মঞ্চ হিসেবে বারেবারেই ব্যবহৃত হয়েছে এবং এই টুর্নামেন্টে সাফল্য পাওয়ার কারণে বেশ কিছু অখ্যাতনামা ক্রিকেটার পরিচিতি পাওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জাতীয় দলের হয়ে সুযোগ পেয়েছে।
সেই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে আইপিএল ২০২৩-এর পরেও। এই সংস্করণে যেসব আনক্যাপড ক্রিকেটার নজর কেড়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ভবিষ্যতে ভারতের জাতীয় দলে সুযোগ পেতে পারেন। এখানে আলোচনা করা হল এমন পাঁচ ক্রিকেটারকে নিয়ে, যাঁরা এখনও অবধি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ না পেলেও, ভবিষ্যতে টিম ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।
ভারতের হয়ে ভবিষ্যতে সুযোগ পেতে পারেন এমন ৫ ক্রিকেটার
৫) আকাশ মাধওয়াল
Akash Madhwal. (Image Source: IPL/BCCI)
আইপিএল ২০২২-এর শেষের দিকে সূর্যকুমার যাদব চোট পেয়ে টুর্নামেন্ট থেকে যখন ছিটকে যান, তখন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ২০ লাখ টাকা মূল্যে আকাশ মাধওয়ালকে তাঁর পরিবর্ত হিসেবে স্কোয়াডে সংযুক্ত করেছিল। তবে গত মরসুমে কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি উত্তরাখন্ডের পেসার।
আইপিএলের ১৬তম সংস্করণেও শুরু থেকে মাধওয়াল সুযোগ পাননি। ৪৬তম ম্যাচে প্রথম সুযোগ এসেছিল এবং আইপিএল অভিষেকে ৩ ওভারে ৩৭ রান দিয়েছিলেন। তবে মরসুম শেষে ৮ ম্যাচ খেলে মাধওয়ালের সংগ্রহে ১৪ উইকেট।
১৫.৬৪ গড় ও ৮.৫৮ ইকোনমি রেট রাখা বোলারের সেরা পারফর্ম্যান্স এসেছিল আইপিএল প্লে-অফের এলিমিনেটরে। মাত্র ৩.৩ ওভারে ৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে আইপিএলের প্লে-অফের ইতিহাসে সেরা পরিসংখ্যান নথিভুক্ত করেছিলেন তিনি। জাসপ্রিত বুমরাহের অবর্তমানে ডেথ ওভারে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অন্যতম প্রধান ভরসা হয়ে ওঠা মাধওয়ালকে ভবিষ্যতে ভারতের পেস আক্রমণের অংশ হিসেবে ভাবা যেতেই পারে।
৪) জিতেশ শর্মা
Jitesh Sharma. (Image Source: IPL/BCCI)
পাঞ্জাব কিংস আরও একটি ব্যর্থ অভিযানের শেষে আইপিএল ২০২৩ শেষ করেছিল পয়েন্ট তালিকায় অষ্টম স্থানে থেকে। তবে দলের ব্যর্থতার মাঝেও, উইকেটকিপার-ব্যাটার জিতেশ শর্মা যেভাবে পারফর্ম করেছেন, তাতে আশ্বস্ত হতে পারে কিংসের টিম ম্যানেজমেন্ট।
মিডল অর্ডারে নেমে ১৪ ইনিংসে ৩০৯ রান করেছেন ১৫৬.০৬ স্ট্রাইক রেটে। এটি লক্ষ্যণীয় যে লোয়ার মিডল অর্ডারে খেলার কারণে জিতেশ একটি ইনিংসেও হাফ-সেঞ্চুরি করতে পারেননি, তাও তিনশো রানের গণ্ডী টপকাতে অসুবিধা হয়নি তাঁর। ২২টি চারের পাশাপাশি ২১টি ছক্কাও হাঁকিয়েছেন তিনি।
২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপে ভারত দীনেশ কার্তিক ও ঋষভ পান্তকে উইকেটকিপার হিসেবে খেলিয়েছিল। তবে ফর্মের কারণে কার্তিক ও দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়ায় পান্ত এখন জাতীয় দলের বাইরে। সেক্ষেত্রে জিতেশকে উইকেটকিপার-ব্যাটার হিসেবে খেলালে একজন উপযুক্ত ফিনিশারের সন্ধান শেষ হতে পারে টিম ইন্ডিয়ার।
৩) তিলক ভার্মা
Tilak Varma. (Image Source: IPL/BCCI)
২০ বছর বয়সী ব্যাটার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে প্লে-অফ অবধি পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। গত মরসুম থেকে আইপিএলে সুযোগ পাওয়া ব্যাটার আইপিএল ২০২৩-এ ইমার্জিং প্লেয়ারের পুরস্কার পাওয়ার দাবীদার ছিলেন।
১১ ইনিংসে ৩৪৩ রান করেছেন ১৬৪.১১ স্ট্রাইক রেটে। তিনশোর বেশী রান করা ব্যাটারদের মধ্যে তাঁর স্ট্রাইক রেট ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। তাঁর বয়স মাত্র ২০ বছর হলেও, পাওয়ারহিটিংয়ের মাধ্যমে নজর কেড়েছেন এবং ২৩টি ছক্কা মেরেছেন পুরো মরসুম জুড়ে।
জাতীয় দলের মিডল অর্ডারে এই মুহূর্তে খুব বেশী বাঁ-হাতি ব্যাটার নেই। তিলককে সুযোগ দেওয়া হলে সেই ঘাটতি পূরণ হবে। এ ছাড়া মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে বোলিংয়ের বিশেষ সুযোগ না পেলেও, ঘরোয়া ক্রিকেটে তিলক বল হাতেও অবদান রেখেছেন। তাই তিলককে ভারতীয় দলে রাখা হলে বোলিং বিকল্প-সম্পন্ন একজন উদীয়মান বাঁ-হাতি ব্যাটারের বৈচিত্র্য যুক্ত হবে।
২) রিঙ্কু সিং
Rinku Singh. (Photo Source: IPL/BCCI)
আইপিএল ২০২৩-এর অন্যতম সেরা ইনিংস এসেছিল উত্তর প্রদেশের এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে, যখন গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে শেষ পাঁচ বলে পাঁচটি ছক্কা হাঁকিয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে অভাবনীয়ভাবে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন।
রিঙ্কু সিং সদ্য সমাপ্ত মরসুমে ১৪ ইনিংসে ৪৭৪ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় নবম স্থানে ছিলেন। ১৪৯.৫২ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা রিঙ্কু দুটি ম্যাচে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচও নির্বাচিত হয়েছিলেন। পুরো মরসুম জুড়েই অসম্ভাব্য পরিস্থিতি থেকে দলকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়ার বেশ কিছু নজির রেখেছিলেন রিঙ্কু।
চাপের পরিস্থিতি থেকে দলকে উদ্ধার করার মতো মানসিকতা দেখানোর কারণে মনে করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মঞ্চের চাপ সামলানোর জন্য রিঙ্কু প্রস্তুত। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও অসাধারণ দক্ষতা দেখানো ক্রিকেটারকে অচিরেই জাতীয় দলে দেখা যেতে পারে।
১) যশস্বী জয়সওয়াল
Yashasvi Jaiswal. (Photo Source: BCCI/IPL)
আইপিএল ২০২৩-এ ইমার্জিং প্লেয়ারের পুরস্কার জেতা ক্রিকেটার ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন প্রজন্মের অন্যতম সেরা প্রতিভা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। রাজস্থান রয়্যালসকে প্লে-অফে নিয়ে যেতে না পারলেও, জয়সওয়াল চমকপ্রদ ব্যাটিং করে সমর্থকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।
সদ্য শেষ হওয়া মরসুমে যশস্বী ১৪ ইনিংসে ৬২৫ রান করেছেন ১৬৩.৬১ স্ট্রাইক রেট ও ৪৮.০৮ গড়ে। ১টি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি হাফ-সেঞ্চুরি করেছেন তিনি, সর্বোচ্চ স্কোর ১২৪। সর্বাধিক চারের সংখ্যায় শুবমান গিলের পিছনে দ্বিতীয় স্থানে আছেন ৮২টি চারসহ।
আইপিএল ২০২৩-এ রয়্যালস ওপেনারের ধারাবাহিক পারফর্ম্যান্স নিঃসন্দেহে নির্বাচকদের নজর এড়ায়নি। রোহিত শর্মা ও কেএল রাহুল সাম্প্রতিক টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলিতে সুযোগ না পাওয়ায় ভারতের টি-২০ দলের ওপেনিং পজিশনে যশস্বী অদূর ভবিষ্যতে সুযোগ পেতে পারেন।
The post যে ৫ ভারতীয় আনক্যাপড ক্রিকেটার আইপিএল ২০২৩-এ সফল হওয়ার পরে জাতীয় দলে সুযোগ পেতে পারেন appeared first on CricTracker Bengali.