BJ Sports – Cricket Prediction, Live Score

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২১-২৩: সেরা ৫ ম্যাচ

 বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২১-২৩: সেরা ৫ ম্যাচ

#image_title

World Test Championship mace. (Image Source: Twitter)

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (ডাব্লিউটিসি) দ্বিতীয় চক্রর লিগ পর্যায় শেষ হয়েছে গত সপ্তাহে। ২০২১ থেকে ২০২৩ অবধি চলা এই চক্রে নয়টি দলের মধ্যে মোট ৬৯টি টেস্ট ম্যাচ আয়োজিত হয়েছিল। লিগ পর্বের শেষে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দল – অস্ট্রেলিয়া ও ভারত – ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। ৭ই জুন থেকে ইংল্যান্ডের দ্য ওভালে আয়োজিত হবে ফাইনাল।

ফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার জন্য নয়টি দলের মধ্যেই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গিয়েছে বিগত দুই বছর। এর মধ্যে এমন বেশ কিছু ম্যাচ খেলা হয়েছে যা শুধু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের চক্রেই নয়, তাৎপর্য বহন করবে টেস্টের সাম্পগ্রিক ইতিহাসে। দেখে নেওয়া যাক এমন পাঁচটি উত্তেজক ম্যাচের দিকে যার জন্য ডাব্লিউটিসি ২০২১-২৩ স্মরণীয় থেকে যাবে।

৫) নিউ জিল্যান্ড বনাম শ্রীলঙ্কা, ক্রাইস্টচার্চ (২০২৩) – নিউ জিল্যান্ড জয়ী ২ উইকেটে

New Zealand vs Sri Lanka. (Photo Source: Twitter)

পাঁচ দিন ধরে ম্যাচ চলার পরেও পঞ্চম দিনের শেষ ওভারে এসে যখন উভয় দলের জয়, ড্র ও টাই, চারটিই ফলাফলের সম্ভাবনা থাকে, তখন সেই টেস্ট নিঃসন্দেহে আলোচনার দাবী রাখে। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ৩৫৫ রান করেছিল এবং জবাবে নিউ জিল্যান্ড এক পর্যায়ে ১৮৮ রানে ৬ উইকেট হারালেও ১৮ রানের লিড নিতে সক্ষম হয়েছিল ড্যারিল মিচেলের ১০২ রানের সৌজন্যে।

দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ১১৫ রান করে শ্রীলঙ্কাকে পৌঁছে দেন ৩০২ রানে এবং কিউয়িদের জন্য লক্ষ্য স্থির হয় ২৮৫ রান। চতুর্থ দিনের শেষে নিউ জিল্যান্ডের স্কোর ছিল ১৭ ওভারে ২৮/১। তবে পঞ্চম দিনে বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হতে অনেক দেরী হয় এবং আম্প্যাররা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একটি অতিকায় সেশনে ৫৩ ওভার খেলা হবে।

রান তাড়া করতে নেমে ৯০ রানে ৩ উইকেট হারালেও ড্যারিল মিচেল ও কেন উইলিয়ামসনের মধ্যে ১৪২ রানের পার্টনারশিপের সৌজন্যে দুর্দান্তভাবে ম্যাচে প্রত্যাবর্তন করে নিউ জিল্যান্ড। ডাব্লিউটিসি ফাইনালে জায়গা করে নিতে হলে শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচটি জিততেই হত এবং মিচেল আউট হতেই দ্রুত আরও চারটি উইকেট নিয়ে আশা উজ্জীবিত রাখেন লঙ্কান বোলাররা।

শেষ ৩ বলে নিউ জিল্যান্ডকে করতে হত ৫ রান এবং হাতে ২ উইকেট। সেঞ্চুরি হাঁকানো উইলিয়ামসন (১২১*) চার মেরে শ্রীলঙ্কার জয়ের আশা শেষ করে দেন। ম্যাচের অন্তিম বলে শট মারতে গিয়ে ব্যাটে বল লাগাতে পারেননি উইলিয়ামসন, যদিও বাইয়ের মাধ্যমে এক রান অর্জন করে নিউ জিল্যান্ডকে একটি স্মরণীয় জয় এনে দেন তিনি।

৪) পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড, রাওয়ালপিন্ডি (২০২২) – ইংল্যান্ড জয়ী ৭৪ রানে

Pakistan vs England. (Photo by Matthew Lewis/Getty Images)

টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য ম্যাচের প্রথম দিনে ৫০০ রানের বেশী স্কোর করার নজির গড়া হয়েছিল ২০২২-এর ১লা ডিসেম্বর। মাত্র ৭৫ ওভার সম্ভব হয়েছিল সেই দিনে এবং তার মধ্যেই ইংল্যান্ড ৫০৬/৪ তুলেছিল। জ্যাক ক্রলি (১২২), বেন ডাকেট (১০৭), অলি পোপ (১০৮) ও হ্যারি ব্রুকের (১৫৩) বিধ্বংসী সেঞ্চুরির সৌজন্যে ৬.৫০ রান রেট রেখে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৬৫৭ রান তুলেছিল।

জবাবে পাকিস্তানের দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ্‌ শফিক (১১৪) ও ইমাম-উল-হক (১২১) সেঞ্চুরি হাঁকান এবং পাকিস্তানকে একটি বড় লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যান। অধিনায়ক বাবর আজমও ১৩৬ রান করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এবং পাকিস্তান তাদের প্রথম ইনিংসে তোলে ৫৭৯।

দ্বিতীয় ইনিংসে আরও দ্রুতগতিতে ব্যাটিং করে ৭.৩৬ স্ট্রাইক রেটে ইংল্যান্ড ৩৫.৫ ওভারে ২৬৪/৭ স্কোরে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে। অত্যন্ত সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল এটি কারণ ৩৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করার জন্য পাকিস্তানের কাছে ১১০ ওভার ছিল। তবে পিচ পাটা হওয়ায় ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস চেয়েছিলেন তাঁর বোলারদের যতটা বেশী সম্ভব ওভার দিতে।

পঞ্চম দিনে এক পর্যায়ে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ১৭৬/৩ এবং মাত্র ১৬৯ রান করতে হত অবশিষ্ট ৫৫ ওভারে। তবে সেখান থেকে স্বাগতিক দলের ব্যাটিং বিভাগে ভাঙন ধরান অলি রবিনসন ও বর্ষীয়ান জেমস অ্যান্ডারসন। দুজনে চারটি করে উইকেট তোলেন এবং ইংল্যান্ডকে জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে যান। তবে নয় উইকেট পড়ার পরে দশম উইকেটে নাসিম শাহ ও মহম্মদ আলি ৮.৫ ওভার অবধি টিঁকে ছিলেন। নাসিমের প্রতিরোধ শেষ করে করে জ্যাক লিচ দশম উইকেটটি তুলে ইংল্যান্ডকে একটি স্মরণীয় জয় এনে দেন।

৩) শ্রীলঙ্কা বনাম পাকিস্তান, গল (২০২২) – পাকিস্তান জয়ী ৪ উইকেটে

Abdullah Shafique and Babar Azam. (Photo by ISHARA S. KODIKARA/AFP via Getty Images)

শ্রীলঙ্কার গলে চতুর্থ ইনিংসে ১০০-র বেশী যে কোনো স্কোর তাড়া করা কঠিন। তবে লক্ষ্য যদি হয় ৩৪৪ রান, সেক্ষেত্রে জেতার জন্য অতিমানবিক কিছু করে দেখাতে হয়। সেই কাজটিই করে দেখিয়েছিলেন পাকিস্তানের ওপেনার আব্দুল্লাহ্‌ শফিক।

প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ২২২ রানের জবাবে ২১৮ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। দ্বিতীয় ইনিংসে দীনেশ চান্ডিমাল (৯৪*), কুসাল মেন্ডিস (৭৬) ও ওশাডা ফার্নান্ডোর (৬৪) হাফ সেঞ্চুরির সৌজন্যে ৩৩৭ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা এবং জয়ের জন্য তারাই এগিয়েছিল।

তবে চতুর্থ ইনিংসে শফিক ১৬০* রানের অভাবনীয় ইনিংস খেলেন। ৪০৮ মিনিট ধরে চলা তাঁর মহাকাব্যিক ইনিংসের সৌজন্যে গলের মতো স্পিন-সহায়ক পিচে শ্রীলঙ্কার তিন স্পিনারকে মোকাবিলা করে পাকিস্তান ৩৪৩ রান তাড়া করেছিল হাতে ৪ উইকেট রেখে।

২) ইংল্যান্ড বনাম ভারত, বার্মিংহ্যাম (২০২২) – ইংল্যান্ড জয়ী ৭ উইকেটে

Joe Root and Jonny Bairstow. (Photo by David Davies/PA Images via Getty Images)

প্রথম ইনিংসে ভারতের ৯৮/৫ স্কোর থেকে ইনিংস গড়ার কাজ শুরু করেন ঋষভ পান্ত (১৪৬) ও রবীন্দ্র জাডেজা (১০৪)। ১৩১.৫৩ স্ট্রাইক রেটে করা পান্তের ইনিংসের সৌজন্যে ইংল্যান্ড ব্যাকফুটে চলে যায় এবং ভারত ৪১৬ স্কোর অবধি পৌঁছয়।

জবাবে জনি বেয়ারস্টো (১০৬) একা লড়ে গেলেও ইংল্যান্ড ২৮৪ রানে অল আউট হয়ে যায় এবং ভারত ১৩২ রানের বিশাল লিড পায়। তবে সেই লিডকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় ভারত এবং দ্বিতীয় ইনিংসে চেতেশ্বর পূজারা ও ঋষভ পান্ত ছাড়া একজন ব্যাটারও হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ২৪৫ রানে অল আউট হয়ে ভারত ৩৭৮ রানের লক্ষ্য রাখে ইংল্যান্ডের সামনে।

ইংল্যান্ডের ওপেনাররা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে শুরু করেন এবং ২১.৪ ওভারে ১০৭ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। এরপরে অধিনায়ক জাসপ্রিত বুমরাহ্‌ ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন এবং ইংল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ১০৯/৩। এই পর্যায়ে ভারত আধিপত্য দেখালেও চতুর্থ উইকেটে বেয়ারস্টো ও জো রুট আগ্রাসী ব্যাটিং করে নিমেষের মধ্যে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নেন।

উভয়ের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জবাব ছিল না ভারতীয় বোলারদের কাছে। রুট ১৪২ রানে এবং বেয়ারস্টো ১১৪ রানে অপরাজিত থাকেন এবং পনেরো বছর পরে ইংল্যান্ডের মাঠে ভারতের টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্ন অধরা থেকে যায়।

১) ভারত বনাম নিউ জিল্যান্ড, কানপুর (২০২১) – ম্যাচ ড্র

India vs New Zealand. (Photo Source: BCCI)

প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই ফাইনালিস্ট কানপুরে সিরিজের প্রথম টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল। স্পিন সহায়ক পিচে দুই দলের ব্যাটাররাই বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারছিলেন না। তবে সেই ম্যাচে অভিষেক হওয়া শ্রেয়াস আইয়ার আলাদা করে নজর কাড়েন এবং ১০৫ রান হাঁকিয়ে ভারতকে ৩৪৫ রানে পৌঁছে দেন।

নিউ জিল্যান্ডের দুই ওপেনার টম ল্যাথাম (৯৫) ও উইল ইয়াং (৮৯) অল্পের জন্য সেঞ্চুরি ফস্কালেও দলকে একটি ভালো শুরু এনে দেন প্রথম ইনিংসে। তবে এরপরে ব্যাটিং বিপর্যয় হওয়ায় ১৫১/০ থেকে নিউ জিল্যান্ড অল আউট হয়ে যায় ২৯৬ রানে।

ভারত দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুর দিকে মুখ থুবড়ে পড়েছিল এবং মাত্র ৫১ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল। সেখান থেকে শ্রেয়াস আইয়ার (৬৫) ও ঋদ্ধিমান সাহা (৬১*) হাফ সেঞ্চুরি করে দলকে উদ্ধার করে ২৩৪/৭ স্কোরে পৌঁছে দেন এবং ভারত ইনিংস ডিক্লেয়ার করার সিদ্ধান্ত নেয় নিউ জিল্যান্ডের সামনে ২৮৪ রানের লক্ষ্য রেখে।

৯৪ ওভার হাতে রেখে রান তাড়া করতে নেমে নিউ জিল্যান্ড নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে থাকে। তাদের যখন নবম উইকেটের পতন হয়, তখনও জয়ের জন্য দলকে ১২৯ রান করতে হত, ফলে জয়ের আশা ছিল না তাদের। কিন্তু ড্র অর্জনের জন্য রাচিন রবীন্দ্র ও অ্যাজাজ প্যাটেল দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেন। ভারতের বোলারদের মোকাবিলা করে অবশিষ্ট ৮.৪ ওভার খেলে দেন এই দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটার এবং ভারতকে কাঙ্ক্ষিত জয় পাওয়া থেকে বঞ্চিত করেন।

The post বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২১-২৩: সেরা ৫ ম্যাচ appeared first on CricTracker Bengali.

Exit mobile version