Cricket World Cup Trophy. (Photo by Gareth Copley-ICC/ICC via Getty Images)
বিশ্বকাপের ঢাকে কাঠি আগেই পড়ে গিয়েছে। আর সেই সঙ্গেই বিশ্বকাপে্র মঞ্চে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে চড়তে শুরু করেছে উত্তেজনার পারদও। আগামী ১৪ অক্টোবর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে হতে চলেছে বিশ্বকাপের মঞ্চে সবচেয়ে হাই ভোল্টেজ ম্যাচ। ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচের দিকো গোটা বিশ্ব যে এই মুহূর্তে তাকিয়ে রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে থেকেই আরম্ভ হয়ে গিয়েছে নানান হিসাব নিকাশও। তার মধ্যেই প্রধান হল দুই দলের একে অপরের সাক্ষাতের পরিসংখ্যান।
ওডিআই বিশ্বকাপের মঞ্চে এখনও পর্যন্ত ভারতের বিরুদ্ধে জিততে পারেনি পাকিস্তান। এমনকী যে ১৯৯২ সালে পাকিস্তান প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতেছিল সেবারও কিন্তু ভারতের কাছে হারতে হয়েছিল তাদের। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সাতবার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। সেখানে সাতবারই হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছে পাক বাহিনীকে। এবারের বিশ্বকাপেও যে ভারতীয় দল সেই ধারা অব্যহত রাখতে মরিয়া হয়ে রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বরাবরই বিশ্বকাপের মঞ্চে সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। এবারও যে তেমনই কোনও বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। ঘরের মাঠে ভারত নিজেদের দাপট বজায় রাখতে মরিয়া। এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৩৩৬ রান করেছে টিম ইন্ডিয়া। পাকিস্তান কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে একবারও ৩০০ রানের গন্ডী টপকাতে পারেনি। বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারত বনাম পাকিস্তান লড়াইয়ের দিকেই চোখ রাখা যাক।
১৯৯২ সালের ওডিআই বিশ্বকাপে ৪৩ রানে জয়ী ভারত
১৯৯২ সালে প্রথমবার ওডিআই বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারত ও পাকিস্তান দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ম্যাচে লড়াইটা লো স্কোরিং হলেও তারকাখচিত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় তুলে নিয়েছিল ভারতীয় দলই। সেই ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৪৩ রানে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। সেই ম্যাচে ৫৪ রান ও আমির সোহেলের উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরার শিরোপা জিতে নিয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর।
টস জিতে সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক। ওপেনিংয়ে ৪৬ রানের ইনিংস খেলে শুরুটা ভালভাবেই করে দিয়েছিলেন অজয় জাদেজা। সেই ম্যাচে ভারতের হয়ে একমাত্র অর্ধশতরান করেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রখমে ব্যাটিং করে সেই ম্যাচে ভারতীয় দল করেছিল ২১৬ রান। জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে ভারতীয় বোলারদের বিরুদ্ধে সেভাবে দাপট দেখাতেই পারেননি পাক ব্যাটাররা। আমির সোহেলকে সাজঘরে ফিরিয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর।
তিনি ছাড়া পাকিস্তানের কোনও ব্যাটারই বড় রান করতে পারেননি সেই ম্যাচে। জাভেদ মিঁয়াদাদ ৪০ রান করলেও পাকিস্তানের জয়ের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। ১৭৩ রানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল পাক বাহিনী।
১৯৯৬ সালের ওডিআই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩৯ রানে জয়ী ভারত
১৯৯৬ সলে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের ম়ঞ্চে নেমেছিল টিম ইন্ডিয়া। বেঙ্গালুরুতে সেই ম্যাচেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের ধারা অব্যহত ছিল ভারতীয় দলের। সেই ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় দল জিতেছিল ৩৯ রানে। নভজোত সিং সিধুর দুর্ধর্ষ ব্যাটিং পারফরম্যান্সের সামনে সেই ম্যাচে হার মানতে হয়েছিল পাকিস্তান শিবিরকে। সেই ম্যাচে ৯৩ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা পুরস্কারও জিতে নিয়েছিলেন নভজোত্ সিং সিধু।
এই ম্যাচেই আমির সোহেল বনাম ভেঙ্কটেশ প্রসাদের সেই বিখ্যাত ড়াইয়ের স্বাক্ষী ছিল সকলে। টসে জিতে এই ম্যাচও প্রথমে ব্যাটিং করেছিল ভারতীয় দল। ওপেনিংয়ে ৯৩ রানের ইনিংস খেলেছিল নভজোত্ সিং সিধু। ভারত ২৮৭ রান করেছিল সেই ম্যাচে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত ২৪৮ রানেই থামতে হয়েছিল পাকিস্তানকে। ভারতের হয়ে সেই ম্যাচে তিনটি করে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন ভেঙ্কটেশ প্রসাদ ও অনিল কুম্বলে।
১৯৯৯ ওডিআই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৪৭ রানে জয়ী ভারত
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই ম্যাচেও লড়াইটা হয়েছিল লো স্কোরিং। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। সেখানে শুরুতে ৪৫ রাের ইনিংস খেলে আরম্ভটা ভালই করে দিয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। কিন্তু মাঝে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। সেখানেই রাহুল দ্রাবিড়ের ব্যাট থেকে এসেছিল ৬১ রান। শেষ মুহূর্তে মহম্মদ আজহারউদ্দিনের ৫৯ রানের ইনিংসের সৌজন্যে ভারতীয়দল পৌঁছয় ২২৭ রানে।
হাতে কম রান নিয়েই লড়াইটা শুরু করেছিলেন ভারতীয় দলের বোলাররা। আর সেই লড়াইয়ের সামনেই মাথা নত করতে হয়েছিল পাক্ ব্যাটারদের। সেই ম্যাচে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপকে একাই ধসিয়ে দিয়েছিলেন ভেঙ্কটেশ প্রসাদ। ২৭ রান দিয়ে সেই ম্যাচে একাই তুলে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। সঈদ আনোয়ার, সেমিল মালিক, ইঞ্জামাম উল হকদের মতো তারকা ক্রিকেটারদের সাজঘরের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন ভেঙ্কটেশ প্রসাদ একাই। সেইসঙ্গেই সুপার সিক্সের মঞ্চে ভারতের পাক বধের প্রধান নায়কও ছিলেন তিনিই।
২০০৩ ওডিআই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৬ উইকেটে জয়ী ভারত
২০০৩ সালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নেমেছিল টিম ইন্ডিয়া। সেই ম্যাচেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী ফর্মে দেখা গিয়েছিল সচিন তেন্ডুলকরকে। শোয়েব আখতার, ওয়াসিম আক্রম এবং ওয়াকার ইউনিসদের মতো তারকা বোলারদের একাই কার্যত বিধ্বস্ত করেছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার। সেই ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক।
সঈদ আনোয়ারের সেঞ্চুরীর সৌজন্যে সেই ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে ২৭৩ রানে পৌঁছেছিল পাকিস্তান। জবাবে সেই ম্যাচে সচিন তেন্ডুলকর ছিলেন পাকিস্তানের বোলারদের সামনে বিধ্বংসী ফর্মে। একা হাতেই শেষ করে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের জয়ের সমস্ত আশা। ৭৫ বলে ৯৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার। তাঁর ইনিংস জুড়ে ছিল ১২টিু চার ও একটি ওভার বাউন্ডারি। শেষ মুহূর্তে যুবরাজ সিংয়ের ৫০ রানের ইনিংস। ৬ উইকেটে সেই ম্যাচ জিতে নিয়েছিল ভারতীয় দল।
২০১১ ওডিআই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৯ রানে জয়ী ভারত
২০১১ সালে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারতীয় দল। সেখানেই সেমিফাইনালের মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নেমেছিল টিম ইন্ডিয়া। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃ্ত্বে সেই ম্যাচেও টিম ইন্ডিয়া ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য। ফের একবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছিল ভারতীয় দলের অধিনায়ক। সেখানেই ৮৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস সচিন তেন্ডুলকরের। এমএস ধোনি সেই ম্যাচে পেয়েছিলেন ২৫ রান। শেষপর্যন্ত ২৬০ রান করেছিল টিম ইন্ডিয়া।
এই ম্যাচেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় বোলাররা ছিলেন বিধ্বংসী ফর্মে। আশিস নেহেরা, জাহির খান থেকে মুনাফ পটেল, যুবরাজ সিং এবং হরভজন সিংরা প্রত্যেকেই তুলে নিয়েছিলেন ২টো করে উইকেট। ২৩১ রানেই সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে থামিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় দলের বোলাররা। ২৯ রানে সেই ম্যাচ জিতে নিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া।
২০১৫ বিশ্বকাপে ৭৬ রানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ী টিম ইন্ডিয়া
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের মঞ্চেই থেমেছিল ভারতের দৌড়। সেখানেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নেমেছিল ভারত। প্রথমেই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এমএস ধোনি। সেই ম্যাচেই ১০৪ রানের সেঞ্চুরী ইনিংস খেলেছিলেন বিরাট কোহলি। সেইসঙ্গে শিখল ধওয়ানের ৭৩ ও সুরেশ রায়নার ৭৪ রানে ভর করে ভারতীয় দল পৌঁছেছিল ৩০০ রানে।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২২৪ রানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। মহম্মদ সামির বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেনি পাক ব্যাটাররা। তিনি একাই তুলে নিয়েছিলেন চার উইকেট। ইউনিস খান, মিসবা উল হক এবং শাহিজ আফ্রিদির মতো তারকা ক্রিকেটারদের সাজঘরের রাস্তায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মহম্মদ সামি। সেই ম্যাচে ৭৬ রানে জয় তুলে নিয়েছিল ভারতীয় দল।
২০১৯ বিশ্বকাপে ৮৯ রানে জয়ী ভারত
২০১৯ সালের বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের হয়ে বিধ্বংসী ফর্মে ছিলেন রোহিত শর্মা। এই বিশ্বকাপেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের মঞ্চে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড রয়েছে ভারতীয় দল। ডাক ওয়ার্থ লুইস নিয়মে এই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। সেখানেই প্রথমে ব্যাটিংয়ের সুযোদ পেয়েছিল ভারতীয় দল। সেখানেই রোহিত শর্মার ব্যাট থেকে এসেছিল ১৪০ রানের ইনিংস। বিরাট কোহলির ব্যাটে এসেছিল ৭৭ রান এবং লোকেশ রাহুল করেছিলেন ৫৭ রান। ভারত করেছিল ৩৩৬ রান।
ভারতের রানের পাহাড়ের সামনে সেবার মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তান। সেই ম্যাচে ২১২ রান করতে পেরেছিল পাকিস্তান। এরপর বৃষ্টির জন্যডাক ওয়ার্থ লুইস নিয়মেই বেরে গিয়েছিল পাকিস্তান। সেখানেই ২ টো করে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া, বিজয় শঙ্কর এবং কুলদীপ যাদবরা।
The post ওডিআই বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারত বনাম পাকিস্তান দ্বৈরথে সাতে সাত টিম ইন্ডিয়ার appeared first on CricTracker Bengali.