কাতার বিশ্বকাপে ফেবারিট বলতে যে কোন দল নেই, তার ষোলোকলা পূরণ হলো কোয়ার্টার ফাইনালের ব্রাজিল – ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে৷ ইতিহাসের সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপজয়ী দলটি এবারের আসরেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌঁড়ে ছিল। কিন্তু কে জানতো, কোয়ার্টার ফাইনালে এসেই থেমে যাবে নেইমার জুনিয়রদের স্বপ্নযাত্রা। শুক্রবার রাতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ট্রাইবেকারে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে ল্যাটিন আমেরিকার দেশটি।
ম্যাচের শুরু থেকেই সমানতালে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল খেলেছে ব্রাজিল এবং ক্রোয়েশিয়া। দুই দলের জমজমাট আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল। কিন্তু ভাগ্যদেবতা মুখ তুলে না তাকালে তো আর গোল হয় না। এই ম্যাচেও হয়েছে তা-ই। দুদলই একাধিক গোলের সুযোগ পেয়েও প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পায়নি। অবশ্য অতিরিক্ত হিসেবে যোগ করা সময়ের দারুণ নৈপূন্য দেখিয়ে ব্রাজিলকে লিড এনে দেন নেইমার।
অবশ্য সেই লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি তিতের শিষ্যরা। রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর আগেই গোল শোধ করে দেন ক্রোয়েটরা। শেষ পর্যন্ত খেলা ১ – ১ সমতায় নির্ধারিত সময় শেষ হলে, ম্যাচ গড়ায় ট্রাইবেকারে। আর তাতেই ক্রোয়েটদের সামনে যেন কাগুজে বাঘ বনে গেল ব্রাজিলিয়ানরা। ফলাফল ৪ – ২ গোলে হার। অবশ্য এই ট্রাইবেকার শুট নিয়েও রয়েছে অনেক আলোচনা-সমালোচনা।
বিশ্বকাপের মতো বিশাল মঞ্চে প্রথম ট্রাইবেকার শুট নিতে অপেক্ষাকৃত তরুন রদ্রিগোকে কেন পাঠানো হলো, এটাই এখন আলোচনার বিষয়। থিয়াগো সিলভার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় থাকতে অনভিজ্ঞ রদ্রিগোকে কেন দায়িত্ব দিলেন তিতে? প্রশ্ন উঠেছে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে । এমনকি দলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার তো শুটই নেননি। অবশ্য এর কারণ হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে তিতে জানালেন, চাপের মুখে পঞ্চম শুটটি মারার জন্যই নেইমারকে রাখা হয়েছিলো।
হেক্সা মিশনে ব্যর্থ হওয়ার পর নেইমারের মুখেও শোনা গেল অনিশ্চয়তার বাণী। আগামীতে ব্রাজিলের হয়ে খেলবেন কি না, জানেন না তিনি। ব্রাজিলিয়ান নাম্বারটেন বলেন, ” আমি জানি না, এই বিশ্বকাপের পর দেশের হয়ে আর খেলবো কি না। তবে এখানেই শেষ করতে চাই না, ফুটবলে আরো অনেক কিছু দেওয়ার আছে আমার। এখন পুরো ব্যাপারটা সময় নিয়ে ভাবতে হবে। সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, আমাদের প্রেরণা দেওয়ার জন্য। আমরা কাতার বিশ্বকাপে এসেছিলাম বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে কিন্তু আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। “
এদিকে নিজের দলকে বিশ্বকাপ জেতাতে না পারায়, ইতোমধ্যেই ব্রাজিল দলের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিতে। তবে সেই বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিক নয়। ব্রাজিলের গ্লোবো, ইংল্যান্ডের ডেইলি মেইলের মতো প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোর দাবি, ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিতে। বলা হচ্ছে, বিশ্বজয়ের জন্য সব রসদ থেকেও ব্যর্থতায় ডুবলেন এই কোচ।