BJ Sports – Cricket Prediction, Live Score

ক্রিকেট হাইলাইটস, ১১ সেপ্টেম্বর: এশিয়া কাপ ২০২২, ফাইনাল ম্যাচ (শ্রীলঙ্কা বনাম পাকিস্তান)

ক্রিকেট হাইলাইটস, ১১ সেপ্টেম্বর: এশিয়া কাপ ২০২২, ফাইনাল ম্যাচ (শ্রীলঙ্কা বনাম পাকিস্তান)

ক্রিকেট হাইলাইটস, ১১ সেপ্টেম্বর: এশিয়া কাপ ২০২২, ফাইনাল ম্যাচ (শ্রীলঙ্কা বনাম পাকিস্তান)

শ্রীলঙ্কা বনাম পাকিস্তান (ফাইনাল ম্যাচ) – হাইলাইটস

এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে এবারের আসরের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেল শ্রীলঙ্কা। অথচ আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে শোচনীয় হারের পর কেউ কল্পনাই করতে পারেনি ভারত-পাকিস্তানের মতো পরাশক্তিদের উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠবে লঙ্কানরা। এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরের শিরোপা জিতলো শ্রীলঙ্কা।

দুবাইয়ে রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) শ্রীলঙ্কার দেয়া ১৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৪৭ রান তুলতেই অল-আউট হয়ে যায় পাকিস্তান। ফাইনালে লঙ্কানদের ম্যাচ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন প্রমোদ মাদুশান। একাই ৪ উইকেট শিকার করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন তিনি। শেষদিকে এক ওভারে ৩ উইকেট শিকার করে ম্যাচ জয়ের আরেক নায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাও।

পাকিস্তানের ব্যাটিং স্তম্ভ হল টপ অর্ডার। কেননা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের প্রায় ৯০ ভাগ কৃতিত্বই মোহাম্মদ রিজওয়ান, বাবর আজম ও ফখর জামানের। তবে এশিয়া কাপে এসে যেন রান খরায় ভুগছেন বাবর। সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করা ৩০ রানেই আসরে তার সর্বোচ্চ স্কোর হয়ে থাকল।

ফাইনালেও ফর্মহীন বাবর ফিরেছেন ৬ বলে ৫ রান করে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে মাদুশানের লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ব্যাট চালালেন বাবর আজম, ফাইন লেগ বাউন্ডারি দিয়ে বল পাঠাতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে দিলশান মাদুশাঙ্কা’র দুর্দান্ত ক্যাচ হন পাকিস্তান অধিনায়ক।

টপ অর্ডারের আরেক ব্যাটার ফখর জামানের অবস্থাটাও বাবরের মতো। গ্রুপ পর্বে হংকংয়ের বিপক্ষে এক ফিফটি ছাড়া খুব একটা ব্যাট হাসেনি তার। ফাইনালেও দলের জন্য রাখতে পারলেন না কোনো ভূমিকা। উল্টো বাবরের পরের বলেই আউট হয়ে দলকে ফেলেন বিপদে। মাদুশানের বলটি উইকেটে টেনে বোল্ড হন ফাখর। ২২ রানেই ২ উইকেট হারায় পাকিস্তান।

শুরুর সেই ধাক্কায় পাওয়ার প্লেতে বড় সংগ্রহ পায়নি পাকিস্তান। ২ উইকেটে তোলে ৩৭ রান। ওপেনার রিজওয়ান অবশ্য টপ অর্ডারের হাল একাই ধরে যাচ্ছেন আসরের শুরু থেকে। এদিনও তিনি হয়ে থাকলেন পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপের আস্থার প্রতীক। দলের প্রাথমিক চাপ সামলে নেন ইফতিখার আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে। তৃতীয় উইকেটে ৫৯ বল মোকাবিলায় ৭১ রানের জুটি গড়েন তারা।

সে জুটি ১৪তম ওভারে এসে ভাঙেন মাদুশান। তার স্লোয়ারে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েন ইফতিখার। ২ চার ও এক ছক্কায়, ৩১ বলে ৩২ রান করেন তিনি। ৪০ বলে যখন ৭৮ রান প্রয়োজন তখন ক্রিজে আসেন হার্ড হিটার মোহাম্মদ নওয়াজ। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের মতো এদিন তিনি কোনো চমক দেখাতে পারেননি।

চামিকা করুনারত্নের শর্ট লেংথের স্লোয়ারে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েন নওয়াজ। ৯ বলে খেলে তিনি করেন মাত্র ৬ রান। অন্যদিকে ক্রিজের একপ্রান্ত আগলে রেখে আসরে তৃতীয় ফিফটি হাঁকিয়ে নেন রিজওয়ান।

তবে তার ব্যাটিং এদিন মোটেও টি-টোয়েন্টি সুলভ ছিল না। ম্যাচের হাল ধরলেও, অনেক বল খেয়ে দলকে ডুবিয়েছেনও তিনি। দলের জয়ের জন্য ২৪ বলে যখন ৬১ রান প্রয়োজন তখন ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়েন বাউন্ডারিতে। ৪ চার ও এক ছক্কার মারে ৪৯ বলে ৫৫ রান করে ফিরেন রিজওয়ান। তাকে সাজঘরে ফেরান হাসারাঙ্গা।

নিজের স্পেলের শেষ ওভারে এসে হাসারাঙ্গা পুরো ম্যাচের চিত্রই বদলে ফেলেন। রিজওয়ানের পর চার বলের ব্যবধানে খুশদিল শাহ (২) ও আসিফ আলিকে (০) ফিরিয়ে জয় নিশ্চিত করে ফেলেন শ্রীলঙ্কা। ১৯ বলে পাকিস্তানের তখনও প্রয়োজন ৫৯ রান। হাতে তিন উইকেট থাকলেও শাদাব খান ছাড়া কার্যত আর কোনো ব্যাটার ছিল না ক্রিজে। শেষ পর্যন্ত সবকটি উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের ইনিংস থামে ১৪৭ রানে।

শ্রীলঙ্কার হয়ে মাদুশান সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া হাসারাঙ্গা ৩টি, করুনারত্নে ২টি এবং মহীশ তিকশানা ১টি করে উইকেট তুলে নেন। এর আগে টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ভানুকা রাজাপক্ষের ৪৫ বলে ৭১ রানের ঝড়ো ইনিংসের পাশাপাশি হাসারাঙ্গার ২১ বলে ৩৬ রানের ওপর ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কা শিবিরে প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন পাকিস্তানি পেসার নাসিম শাহ। প্রথম দুই বলে ওয়াইডসহ ২ রান দিলেও পরের বলেই দারুণ এক ইন-সুইঙ্গারে নাসিম উপড়ে ফেলেন কুশল মেন্ডিসের স্টাম্প। ওই ওভারে মাত্র ৪ রান খরচ করেন তিনি। হাসনাইন পরের ওভারে দেন ১২ রান।

এক ওভার বিরতিতে আরও একটি উইকেট পড়ে শ্রীলঙ্কার। হারিস রউফের করা ওভারের দ্বিতীয় বলে লং অফে খেলতে গিয়ে ক্যাচ ‍তুলে দেন পাথুম নিসাঙ্কা। আউট হওয়ার আগে ১১ বলে ৮ রান করেন তিনি। পেছন দিকে দৌড়ে গিয়ে নিসাঙ্কার ক্যাচটি নেন পাকিস্তান দলপতি বাবর আজম। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে ইন-সুইঙ্গারে দানুশকা গুনাথিলাকার (১) উইকেটও নেন হারিস।

শ্রীলঙ্কা দলকে অনেকটা একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। পাওয়ার প্লে শেষে লঙ্কানরা যে ৪৭ রান করেছিল, সেখানে ডি সিলভারই ছিল ২৭ রান। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা সিলভা আউট হন ইনিংসের অষ্টম ওভারে। ইফতিখারের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হন তিনি। শাদাবকে মেরে খেলতে গিয়ে অধিনায়ক দাসুন শানাকা মাত্র ২ রান করে সাজঘরে ফিরেন।

দলীয় ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা যখন ধুঁকছিল, তখন দলের হাল ধরেন হাসারাঙ্গা ও রাজাপক্ষ। দুজনে মিলে গড়েন ৫৮ রানের জুটি। এর মধ্যে হাসারাঙ্গা একাই ২১ বলে করেন ৩৬ রান। সেই জুটি ভাঙেন হারিস। শেষ দিকে আরেকটা শক্ত জুটি দাঁড় করান রাজাপক্ষ ও করুনারত্নে। ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত তাদের জুটি থেকে আসে ৫৪ রান।

৬টি চার ও ৩টি ছক্কায়, ৪৫ বলে অপরাজিত ৭১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন রাজাপক্ষ। অপরদিকে করুনারত্নে ১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। পাকিস্তানের হয়ে হারিস রউফ সর্বাধিক ৩টি এবং শাদাব খান, ইফতিখার আহমেদ ও নাসিম শাহ ১টি করে উইকেট তুলে নেন।

ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন ভানুকা রাজাপক্ষ। এছাড়া পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করে প্লেয়ার অফ দ্যা সিরিজ নির্বাচিত হয়েছে অল-রাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।


শ্রীলঙ্কা বনাম পাকিস্তান এর স্কোরবোর্ড

শ্রীলঙ্কা – ১৭০/৬ (২০.০)

পাকিস্তান – ১৪৭/১০ (২০.০)

ফলাফল – শ্রীলঙ্কা ২৩ রানে জয়ী 

প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – ভানুকা রাজাপক্ষ

প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ – ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা



শ্রীলঙ্কা বনাম পাকিস্তান ম্যাচের একাদশ

শ্রীলঙ্কা দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), কুশল মেন্ডিস (উইকেট রক্ষক), পাথুম নিসাঙ্কা, দানুশকা গুনাথিলাকা, ভানুকা রাজাপক্ষ, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, চামিকা করুনারত্নে, মহীশ তিকশানা, প্রমোদ মাদুশান, এবং দিলশান মাদুশাঙ্কা।
পাকিস্তান বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেট রক্ষক), ফখর জামান, খুশদিল শাহ, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ নওয়াজ, আসিফ আলী, শাদাব খান, হারিস রউফ, মোহাম্মদ হাসনাইন, এবং নাসিম শাহ।

 

Exit mobile version