শ্রীলঙ্কা বনাম নেদারল্যান্ডস (ম্যাচ ৯) – হাইলাইটস
‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে চূড়ান্ত পর্বে পা বাড়াল এশিয়া কাপ ২০২২ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) জিলংয়ে দিনের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ১৬ রানে হারিয়েছে তাঁরা। এই জয়ে গ্রুপ পর্ব থেকে সর্বপ্রথম দল হিসেবে সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত করলো লঙ্কানরা।
হারলেই বাদ এমন সমীকরণ সামনে রেখে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬২ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। ব্যাট হাতে ঝড় তুলে ৪৪ বলে ৭৯ রান করেন কুশল মেন্ডিস।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার ম্যাক্স ও’ডাউডের দুর্দান্ত ইনিংস সত্ত্বেও বাকিদের ব্যর্থতায় নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রানের বেশি করতে পারেনি ডাচ’রা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে ও’ডাউড ৫৩ বলে অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংস খেলেন।
জিলংয়ের কারদিনিয়া ওভালে নেদারল্যান্ডস খেলতে নেমেছিল দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে। তবে নামিবিয়া ও আরব আমিরাতের বিপক্ষে পাওয়া জয় দুটিতে ব্যবধান ছিল স্বল্প, রানরেটও ছিল কম। বিপরীতে নামিবিয়ার কাছে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করা শ্রীলঙ্কার ভান্ডারে ছিল আমিরাতকে হারানোর ২ পয়েন্ট।
তবে একমাত্র জয়টির ব্যবধান বেশি (৭৯ রান) হওয়ায় রানরেট ছিল বেশ ভালো। যে কারণে জিতলেই প্রথম রাউন্ড অতিক্রম করার সুযোগ ছিল লঙ্কানদের। আর সেই সুযোগই কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কাকে সুপার টুয়েলভে উঠিয়েছেন কুশল মেন্ডিস।
ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম থেকেই রান তুলতে হিমশিম খেয়েছেন লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা। ২১ বলে ১৪ রান করে নিসাঙ্কা আউট হওয়ার পর একই সংগ্রাম অন্য ব্যাটারদেরও করতে হয়। তবে একপ্রান্ত ধরে রাখা কুশল যেন ভিন্ন উইকেট আর ভিন্ন বোলিংয়ের বিপক্ষে ব্যাট করছিলেন!
২০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হওয়ার আগে ৪৪ বলে ৭৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। যেখানে ছিল ৫টি চারের সাথে সমান সংখ্যক ৫টি ছক্কা। এটি ছিল তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি। শেষ দিকে হাত খুলে খেলা কুশলের নৈপুণ্যে শেষ ১০ ওভারে ১০২ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। কুশল ছাড়া দলের অন্য ৭ ব্যাটসম্যান মিলে তোলেন ৭৯ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০ বলে ৩১ রান করেন চারিত আসালাঙ্কা।
স্কোরবোর্ডে ১৬২ রান তুলেও অবশ্য কিছুটা ভাবনায় ছিল শ্রীলঙ্কা। কেননা ইনজুরির কারণে প্রথম সারির পেসারদের ছাড়া মাঠে নামতে হয়েছিল তাদের। প্রথম ম্যাচের আগের দিন ছিটকে গিয়েছিলেন দিলশান মাদুশঙ্কা। আরেক পেসার দুষ্মন্ত চামিরার টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেছে তৃতীয় ম্যাচের আগের দিন। দুজনের পর যিনি ভরসা হতে পারতেন, অসুস্থতার কারণে সেই প্রমদ মাদুশানও এই ম্যাচে ছিলেন একাদশের বাইরে।
প্রধান তিন বোলার না থাকায় শ্রীলঙ্কা হাসারাঙ্গা, মহীশ তিকশানা এবং ধনঞ্জয়া ডি সিলভা এই তিন স্পিনত্রয়ীকে নিয়ে বোলিং বিভাগ সাজায়। তবে দলকে নিরাশ করেননি তাঁরা।
১৬৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলীয় ২৩ রানের মাথায় ফিরে যান ডাচ ওপেনার বিক্রমজিৎ সিং। গত ম্যাচের ম্যাচসেরা বাস ডি লিডও বেশিক্ষণ টেকেননি। ১০ বলে ১৪ রান করে কুমারার বলে বিদায় নেন তিনি। আর রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে কলিন অ্যাকারমান। ফলে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ডাচ’রা।
এরপর টম কুপার ও অধিনায়ক স্কট অ্যাডওয়ার্ডস ও’ডাউডের সঙ্গে মিলে কিছুটা চেষ্টা চালায় বটে কিন্তু আস্কিং রানরেটের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে রান তুলতে গিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় দুজনকেই। কুপার ১৯ বলে ১৬, অ্যাডওয়ার্ডস ১৫ বলে ২১ রান করে করেন।
এই দুজনের বিদায়ের পর আর কেউই ও’ডাউডকে সঙ্গ দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে দলকে জেতানোর চেষ্টা করেন তিনি। ম্যাচের শুরু থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করার নজির সৃষ্টি করেন তিনি। খেলেন ৫৩ বলে ৭১ রানের ইনিংস। তার ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছক্কার মার।
২৮ রানে ৩ উইকেট শিকার করে নেদারল্যান্ডসকে আটকে দেওয়ায় বড় ভূমিকা রাখেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এছাড়া মহীশ তিকশানা ২টি, এবং লাহিরু কুমারা ও বিনুরা ফার্নান্দো ১টি করে উইকেট তুলে নেন।
শ্রীলঙ্কা বনাম নেদারল্যান্ডস এর স্কোরবোর্ড
শ্রীলঙ্কা – ১৬২/৬ (২০.০)
নেদারল্যান্ডস – ১৪৬/৯ (২০.০)
ফলাফল – শ্রীলঙ্কা ১৬ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – কুশল মেন্ডিস
শ্রীলঙ্কা বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচের একাদশ
শ্রীলঙ্কা | দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), কুশল মেন্ডিস (উইকেট রক্ষক), পাথুম নিসাঙ্কা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, চারিত আসালাঙ্কা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ভানুকা রাজাপক্ষ, চামিকা করুনারত্নে, মহীশ তিকশানা, বিনুরা ফার্নান্দো এবং লাহিরু কুমারা। |
নেদারল্যান্ডস | স্কট এডওয়ার্ডস (অধিনায়ক ও উইকেট রক্ষক), ম্যাক্স ও’ডাউড, বাস ডি লিড, বিক্রমজিৎ সিং, টম কুপার, রোয়েলফ ভ্যান ডের মেরওয়ে, কলিন অ্যাকারম্যান, টিম প্রিঙ্গল, টিম ভ্যান ডের গুগেন, পল ভ্যান মিকেরেন এবং ফ্রেড ক্লাসেন। |