একটা সময় নিজের দল অস্ট্রেলিয়াকেই সমর্থন করতেন না অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার উসমান খাজা। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করলেন অস্ট্রেলিয়ান এই ওপেনার নিজেই। তবে ঠিক কি কারণে তিনি নিজের দলকে সমর্থন দিতেন না তাও জানান খাজা।
সম্প্রতি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান তার বেড়ে ওঠার সময় তিনি অস্ট্রেলিয়া দলকে সমর্থন দিতেন কি না। জবাবে খুব সাবলীলভাবেই খাজা স্বীকার করেন যে তিনি সমর্থন করতেন না। খাজা বলেন, ” অপ্রিয় হলে এটাই সত্য যে, আমি ছোট বেলায় অস্ট্রেলিয়া দলটাকে সমর্থন করতাম না। ১৩ – ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত আমি টিম অস্ট্রেলিয়াকে একটুও সমর্থন করতাম না। আমি অস্ট্রেলিয়া দলটির সঙ্গে নিজেকে কোনভাবেই সম্পৃক্ত করতে পারতাম না। প্রিয় দল বলে মনেই হতোনা। “
উসমান খাজা মূলত পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত একজন ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের প্রথম মুসলিম খেলোয়াড়ও তিনি। তার সঙ্গে হওয়া বর্ণনাদী আচরণ নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন খাজা। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে এখনও বর্ণবাদ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় এমনটাও দাবি করেন তিনি। খাজা নিজেও বেশ কয়েকবার এর সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানান ।
শেতাঙ্গ অস্ট্রেলিয়ানরা বর্ণবাদী আক্রমণ করত দাবি করে খাজা বলেন এই ব্যাপারগুলো তার ওপর প্রভাব ফেলত। খাজা বলেন, ” যখন আমি খেলা দেখার জন্য টিভির সামনে বসতাম, মনে হতো খেলার সময় একদল উচ্ছৃঙ্খল, এবং বিয়ার পান করতে থাকা শ্বেতাঙ্গ অস্ট্রেলিয়ানরা বর্ণবাদী আচরণের মধ্য দিয়ে আমাকে অপমান করছে। এই ব্যাপারটা আমাকে ভীষণ নাড়া দিতো। মনে হতো, এই দলটি আমাকে সমর্থন করে না, আমি তাদের কেন সমর্থন করতে যাব ? দলটাকে তাই মন থেকে সমর্থন দিতে পারতাম না। “
খাজার দাবি, তার বড় হওয়ার সময়টা মোটেও সহজ ছিল না। তিনি যে বর্ণবাদী, আচরণের মধ্য দিয়ে তাকে সেটা বুঝিয়ে দেওয়া হতো। এমনকি তাকে বর্ণবাদী নামে ডাকাও হতো। সেই স্মৃতি চারন করে খাজা বলেন, ” আমার বড় হওয়ার সময়টা সহজ ছিলোনা মোটেই। জাতিগত প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বর্ণবাদী নামে ডাকা হতো আমাকে। একবার ভাবুন কি কঠিন একটা সময় পার করেছি আমি। এই ব্যাপারগুলো ভীষণ স্পর্শকাতর ছিলো। মনের ভেতর একদম গেথে গিয়ছিলো। আমার বড় হওয়া তাই ভীষণ কঠিন ছিলো। “
বর্ণবাদের প্রভাব জানাতে যেয়ে খাজা আরো বলেন, ” বর্নবাদ বিষয়টি প্রত্যেক মানুষের জন্য অভিশাপ। মানুষের বর্নের ওপর কারো হাত নেই, কিন্ত অবচেতন মনের পক্ষপাত সব সময় থাকে। যদি একজন ক্রিকেটার শ্বেতাঙ্গ এবং অন্যজন ভিন্ন বর্ণের হয়, তবে সাদা কোচ সব সময় সাদা ক্রিকেটারকেই বেছে নেবে। এটা ভীষন বাজে একটা অবস্থা। যার সাথে এসব ঘটে তাকে এই ব্যাপারগুলো মানসিকভাবে পিছিয়ে দেয়। ”
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ২০০৫ সালে অস্ট্রেলীয় অনূর্ধ্ব – ১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে অসাধারণ নৈপূন্য প্রদর্শন করেছিলেন এবং সেটার জন্য তিনি পুরস্কারও পেয়েছিলেন।পরবর্তীকে অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে তার অভিষেক হয়।বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতেই মাঠ মাতাচ্ছেন তিনি।