২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে যায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। দলের সাথে সেই সফরের স্কোয়াডে ছিল ১৬ বছরের এক চনমনে কিশোর। ব্যাকআপ উইকেটরক্ষক হিসেবে নেয়া হয়েছিল তাকে। ব্যাটিং কিংবা কিপিং নিয়ে তেমন উচ্চাশাই ছিল না তাকে নিয়ে। ইংল্যান্ডের সেই সফরে ১৬ বছর বয়সে প্রস্তুতি ম্যাচে সাসেক্সের বিপক্ষে ৬৩ রানের ইনিংস এবং নটিংহ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে অপরাজিত ১১৫* রানের ইনিংস খেলে ছেলেটি।
এরপরই টিম ম্যানেজম্যান্টকে তাকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেন ‘সেই ছেলেটা। যার ফলে ওই সফরের প্রথম টেস্টেই ঐতিহাসিক লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামিয়ে দেয়া হয় তরুণ মুশফিকুর রহিমকে। ম্যাচে দুই ইনিংস মিলে রান করেন মাত্র ২৯। ইঞ্জুরির কারণে খেলা হয় নি দ্বিতীয় টেস্টে।
২০০৫ সালের ২৬ মে মুশফিক লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জার্সিতে টেস্ট অভিষিক্ত হন। তার পরের বছর ৬ আগস্ট হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয়। তবে আজ থেকে প্রায় ১৭ বছর আগে ২৬ মে তারিখে লর্ডসে শুরু হয়েছিল একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকের যে যাত্রা, তা আজও চলমান তার আপন মহিমায়। প্রায় দেড় দশকের এ যাত্রায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের হাঁটি হাঁটি পা পা থেকে শুরু করে শক্ত সামর্থ্য হয়ে দৌড়ানো পর্যন্ত প্রত্যেক ঘটনার সাক্ষী মুশফিক।
২০০৯ সালের আগস্ট থেকে ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মুশফিক ছিলেন টিম বাংলাদেশের সহকারী অধিনায়কের দায়িত্বে। ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের ভূমিকায়। তার অধীনে বাংলাদেশ টেস্টে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলংকার মত পরাশক্তিদের। প্রথমবারের মতো খেলেছে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনালে। সবমিলিয়ে ৩৭টি ওয়ানডে, ৩৪টি টেস্ট এবং ২৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিক।
এর আগে ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে টিম বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা ছিল মুশির ঝুলিতে। অন্যান্যদের মধ্যে এই দলে ছিলেন ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক তারকা সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল। মুশফিকের নেতৃত্বে টাইগাররা সে বছর কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে সমর্থ হয়।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে ৮০টি টেস্ট খেলেছেন মুশফিক। টেস্ট ক্যারিয়ারের মোট সেঞ্চুরির ৪২% সেঞ্চুরিকে নিয়ে গিয়েছেন ডাবলে। তার নিচে স্টিফেন ফ্লেমিং ৩৩%, বব সিম্পসন ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ৩০% সেঞ্চুরিকে ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপান্তর করেছেন। দেশের ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান এবং এখনো পর্যন্ত একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৩টি ডাবল সেঞ্চুরি করা মুশফিক মোট ৭টি সেঞ্চুরিতে ৩৬.০০ গড়ে রান করেছেন ৪৯৩২। যেখানে অপরাজিত ছিলেন ১০ বার। অর্ধ শতকের ইনিংস খেলেছেন ২৫টি। যেখানে মুশি বাউন্ডারি মেরেছেন ৫৯৬টি, ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন ৩১টি।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৩৩ ম্যাচ খেলে ৩৬.৬ গড়ে মুশফিকের রান ৬৬৯৭। সেঞ্চুরি আছে ৮টি, অর্ধ শতকের ইনিংস আছে ৪১টি। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণ টি-টোয়েন্টিতেও টাইগারদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৬টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৬ ফিফটিতে মুশফিকের নামের পাশে রয়েছে ১৪৯৫ রান।
২০০৫ সালে ঐতিহাসিক লর্ডসে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া ছোট্ট মুশফিকের আজ ৩৫তম জন্মদিন। ১৯৮৭ সালের ৯ মে বগুড়ার মাটিডালিতে বাবা মাহবুব হামিদ ও মা রহিমা খাতুনের কোল আলোকিত করে এ ধরায় আগমন মি ডিপেন্ডেবলের। দেশের ক্রিকেটে গত দেড় দশকের সকল উত্থানপতনের সাক্ষী তিনি। শুধু তাই নয়, মুশফিকের ব্যাট ধরেই অনেক সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। ক্রিকেট সমর্থকসহ সকলের প্রত্যাশা আরও বেশ কয়েকবছর জাতীয় দলকে সার্ভিস দিয়ে যাবেন এ নির্ভরতার প্রতীক। শুভ জন্মদিন মুশফিকুর রহিম।