বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ডস (ম্যাচ ১৭) – হাইলাইটস
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৯ রানের জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলো বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে আরেকটি আক্ষেপ ফুরোল লাল-সবুজের দলের। সেই ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ৬টি আসর কেটে গেলেও মূল পর্বে আর একটি ম্যাচে জয় পায়নি তাঁরা। এবার সেই অপেক্ষার অবসান হয়েছে।
একের পর এক হারে কিছুটা ব্যাকফুটে থেকেই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দলের আত্মবিশ্বাস এমন তলানিতে ছিল, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় নিয়েও ছিল ঢের শঙ্কা। তবে টুর্নামেন্টে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে খেলতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর দুর্দান্ত বোলিং ও ফিল্ডিয়ে অবশেষে অধরা জয় পেল সাকিবের দল।
যদিও ম্যাচজুড়েই সাকিবদের পরীক্ষা নিয়েছে গ্রুপপর্বে দুর্দান্ত খেলা নেদারল্যান্ডস। বল হাতে বাংলাদেশকে নাগালের মধ্যেই আঁটকে ফেলেছিল বাস ডি লিড’রা। তবে ব্যাট হাতে শুরুতে খেই হারিয়ে ফেলে স্কট এডওয়ার্ডসের দল। তবে কলিন অ্যাকারম্যানের অনবদ্য ব্যাটিং কিছুটা আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।
বাংলাদেশের দেয়া ১৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম দুই বলেই দুই উইকেট হারিয়ে বসে নেদারল্যান্ডস। তাসকিন আহমেদের লেন্থের বল ব্যাটের কোণায় লাগিয়ে একে একে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বিক্রমজিৎ সিং এবং বাস ডি লিড। এরকিছুক্ষণ পর টানা দুটি রানআউটে আরও ব্যাকফুটে চলে যায় ডাচরা।
১৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়া ডাচদের আশার আলো দেখাচ্ছিলেন নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক এডওয়ার্ডস এবং অ্যাকারম্যান। তারা দুইজন মিলে ৫ম উইকেটে ৪৪ রানের একটি জুটি গড়ে তোলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সেই জুটি ভাঙেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সাজঘরে ফেরার আগে এডওয়ার্ডস ২৪ বলে ১৬ রান করেন। কিন্তু একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন অ্যাকারম্যান।
এরপর ১৩তম ওভারের ৪র্থ বলে টিম প্রিঙ্গলকে বোল্ড করেন হাসান মাহমুদ। ৬ বলে ১ রান করে আউট হন তিনি। এরপর বৃষ্টির কারণে ১০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর তা আবার শুরু হয়। খেলা শুরু হতে না হতেই হাসান মাহমুদের বলে আউট হয়ে যান লোগান ফন বিক (২)। ১৯ বছর বয়সী শারিজ আহমেদ ৮ বলে ৯ রান করে আউট হন।
এর মধ্যে হাফ সেঞ্চুরি করে মারমুখি হয়ে ওঠেন অ্যাকারম্যান। তবে তাকে ফেরানোর মূল কাজটি করেন তাসকিন। ৬ চার ও ২ ছক্কায়, ৪৮ বলে ৬২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরেন অ্যাকারম্যান। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৩৫ রান তুলতেই অল-আউট হয়ে যায় ডাচরা। শেষ মুহূর্তে ১৪ বলে ২৪ রান করেন পেসার পল ভ্যান মিকেরেন।
নেদারল্যান্ডসের ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে দুর্দান্ত বোলিং করেছে বাংলাদেশের পেসাররা। ২৫ রানে তাসকিনের চার উইকেটের পাশাপাশি হাসান মাহমুদও পেয়েছেন ১৫ রান খরচায় দুই উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান এবং সৌম্য সরকার। এছাড়া ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিলেও কোনো উইকেট নিতে পারেননি মোস্তাফিজুর রহমান।
এদিকে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করলেও পাওয়ার প্লের পর এলোমেলো ব্যাটিং করতে থাকে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ওপেনিং জুটি থেকে আসে ৪৩ রান। এরপর বড় শট খেলতে গিয়ে একে একে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাকিব, লিটন দাস, ইয়াসির আলী’রা।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লেতে সৌম্য (১৪) আউট হওয়ার পর তার সঙ্গী নাজমুল হোসেনও বেশিক্ষণ উইকেটে টিকে থাকতে পারেননি। ২০ বলে ২৫ রান করে প্রিঙ্গলের বলে আউট হন তিনি। এরপর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সেরা ফর্মে থাকা লিটনও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১১ বলে ৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি।
যেখানে সাকিবকে নিয়ে আশা ছিল সবার, সেই সাকিবও ৭ রান করে শারিজের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন। এদিন ব্যর্থ ছিলেন ইয়াসির এবং নুরুল হাসান’রা। বৃষ্টির কারণে মাঝে ম্যাচ কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। ম্যাচের আগেই জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশের ম্যাচের বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
এরপর শুরু হয় আফিফ শো। ফ্রেড ক্ল্যাসেন-লিডসদের পাত্তা না দিয়ে ২৭ বলে ৩৮ রান করেন আফিফ। মাঝে একবার জীবনও পেয়েছিলেন তিনি। শেষের দিকে মোসাদ্দেক ১২ বলে অপরাজিত ২০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। নেদারল্যান্ডসের হয়ে দুটি করে উইকেট পেয়েছেন পল ভ্যান মিকেরেন এবং বাস ডি লিড। এছাড়া লোগান ফন বিক, টিম প্রিঙ্গল, শারিজ আহমেদ এবং ফ্রেড ক্ল্যাসেন ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ডস এর স্কোরবোর্ড
বাংলাদেশ – ১৪৪/৮ (২০.০)
নেদারল্যান্ডস – ১৩৫/১০ (২০.০)
ফলাফল – বাংলাদেশ ৯ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – তাসকিন আহমেদ
বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচের একাদশ
বাংলাদেশ | সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নুরুল হাসান (উইকেট রক্ষক), নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, আফিফ হোসেন, সৌম্য সরকার, ইয়াসির আলী, মোসাদ্দেক হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ এবং হাসান মাহমুদ। |
নেদারল্যান্ডস | স্কট এডওয়ার্ডস (অধিনায়ক ও উইকেট রক্ষক), ম্যাক্স ও’ডাউড, বাস ডি লিড, বিক্রমজিৎ সিং, কলিন অ্যাকারম্যান, লোগান ফন বিক, টম কুপার, টিম প্রিঙ্গল, শারিজ আহমেদ, পল ভ্যান মিকেরেন এবং ফ্রেড ক্ল্যাসেন। |