বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে (ম্যাচ ২৮) – হাইলাইটস
রবিবার (৩০ অক্টোবর) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২ এর সুপার টুয়েলভ এ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে ৩ রানের রুদ্ধশ্বাস জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ের মাধ্যমে সেমিফাইনালের আশা এখনও বাঁচিয়ে রাখল টাইগাররা।
শেষ ওভারে ঘটল বিশাল নাটকীয়তা। শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বল তুলে দিলেন মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে। ব্যাট করছেন ব্র্যাড ইভান্স এবং রায়ান বার্ল। প্রথম বলে দিলেন ১ রান। দ্বিতীয় বলে ইভান্স ছক্কা হাঁকাতে গেলেন। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে বলটি তালুবন্দী করে নিলেন আফিফ হোসেন। ফলে জিম্বাবুয়ের ৪ বলে প্রয়োজন হয় ১৫ রান।
তৃতীয় বলটি উইকেটরক্ষকের পেছন দিয়ে বাউন্ডারি মেরে দেন রিচার্ড এনগারাভা। চতুর্থ বলে তিনি হাঁকান ছক্কা। ২ বলে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন পড়ে ৫ রান। পঞ্চম বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে মিস করেন এনগারাভা। বল ধরে স্ট্যাম্প ভেঙে দিতে মোটেও বিলম্ব করেননি উইকেট রক্ষক নুরুল হাসান। ফলে শেষ বলে প্রয়োজন হয় ৫ রান।
উইকেটে আসা নতুন ব্যাটার ব্লেসিং মুজারাবানি ক্রিজ ছেড়ে ব্যাট চালান। কিন্তু বল মিস করেন। উইকেটরক্ষক নুরুল আবার স্ট্যাম্পিং করে দিলেন। সেই সাথে বিজয়োল্লাসে মেতে উঠে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের দলের ক্রিকেটাররা করমর্দন করতে করতে মাঠও ছেড়ে গেছেন। নাটকের শুরুটা তখন থেকেই।
গ্যাবার বড় পর্দায় তখনো কোনো দলকে বিজয়ী ঘোষণা করেনি। সেখানে মুজারাবানির স্টাম্পিংয়ের ছবিটাই বারবার ভাসছিল। দুই-তিনবার দেখার পরই বিষয়টি স্পষ্ট হয়। নুরুল বলটি স্টাম্প পার করার আগেই গ্লাভসবন্দী করেন। নিয়ম অনুযায়ী, বলটি ধরতে হবে স্টাম্প পার হওয়ার পর। বড় পর্দায় তখন ভেসে ওঠে ‘নো বল’। আম্পায়ার মারাই এরাসমাসের হাতের ইশায়ায় দুই দলের ক্রিকেটাররা আবার মাঠে নেমে আসেন।
কিন্তু শেষ বলে ব্যাটে বল লাগাতে পারলেন না মুজারাবানি। নুরুল অপেক্ষা করে থাকলেন কিছুক্ষণ। এরপর ভাঙলেন স্টাম্প। সেই সাথে দ্বিতীয় দফা জয়ের উদ্যাপন শুরু করে বাংলাদেশ।
এর আগে ব্রিসবেনে সকলে দেখেছে তাসকিন এবং মোস্তাফিজ শো। তাসকিন ও মোস্তাফিজের বোলিং তোপে দিশেহারা হয়ে পরে জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বল পেয়ে তুলে মেরেছিলেন ওয়েসলি মাধাভেরে (৪)। তা ক্যাচ ধরেন মোস্তাফিজ। নিজের পরের ওভারে আবারও উইকেট তুলে নেন তাসকিন। লেন্থের বলে উইকেটরক্ষকের কাছে ক্যাচ দেন অধিনায়ক ক্রেগ এরভিন। তিনি ফিরে যান ৮ রান করে।
এরপর মোস্তাফিজ নিজের প্রথম ওভারেই প্রথম তুলে নেন মিল্টন শুম্বাকে (৮)। এরপর সিকান্দার রাজাকে আউট করে জিম্বাবুয়েকে বড় চাপে ফেলে দেন এই কাটার মাস্টার। রেজিস চাকাভাকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন তাসকিন। চাকাভা করেন ১৫ রান।
কিন্তু এরপর দলের হাল ধরেন শন উইলিয়ামস এবং বার্ল। তাদের গড়া ৬৩ রানের জুটি জিম্বাবুয়েকে জয়ের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সাকিবের ওভারে রান আউট হন উইলিয়ামস। ৮ বাউন্ডারিতে, ৪২ বলে ৬৪ রান করেন তিনি। এরপরই ম্যাচটা চলে যায় বাংলাদেশের হাতে। শেষ পর্যন্ত নানান নাটকীয়তার পর জিম্বাবুয়েকে ৩ রানে হারায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ১টি মেডেন সহ ১৯ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট শিকার করেন। যা আন্তর্জাতিক টি২০-তে তাঁর দ্বিতীয় ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। সেই সাথে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচও নির্বাচিত হয়েছেন তাসকিন। অপরদিকে ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে ২টি উইকেট তুলে নেন আর এক পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া মোসাদ্দেক হোসেন ২টি উইকেটে পেয়েছেন।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেনের দুর্দান্ত ফিফটির উপর ভর করে নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ৭ চার ও ১ ছক্কায়, ৫৫ বলে ৭১ রানের ইনিংস খেলেন নাজমুল হোসেন।
শুরুতে সৌম্য ও নাজমুলের ওপেনিং জুটি এবারও জমেনি। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে তাদের গড়া ১০ রানের জুটি ভেঙে দেন মুজারাবানি। এরপর লিটন দাসকে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছিলেন নাজমুল। তবে বাংলাদেশের বর্তমানের সেরা ব্যাটার লিটনও আউট হন ১২ বলে ১৪ রান করে। মুজারাবানির বল পেছনে স্কুপ করতে গিয়ে ব্যাটের কিনারায় লাগে লিটনের, যা ধরে ফেলেন টেন্ডাই চাতারা।
এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে দলের হাল ধরেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব। নাজমুলকে নিয়ে ৫৪ রানের জুটি গড়ে ভালোভাবেই এগোতে থাকেন তিনি। তবে উইলিয়ামসের প্রথম ওভারেই ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাকিব (২৩)। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পর নাজমুলও সাজঘরে ফিরে যান।
শেষের দিকে আফিফ হোসেনের ১৯ বলে ২৯ রানের ক্যামিও ইনিংসের সৌজন্যে ১৫০ রানের লড়াকু স্কোর তুলতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের হয়ে দুটি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন মুজারাবানি এবং এনগারাভা। এছাড়া উইলিয়ামস ও রাজা একটি করে উইকেট শিকার করেন।
বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে এর স্কোরবোর্ড
বাংলাদেশ – ১৫০/৭ (২০.০)
জিম্বাবুয়ে – ১৪৭/৮ (২০.০)
ফলাফল – বাংলাদেশ ৩ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – তাসকিন আহমেদ
বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে ম্যাচের একাদশ
বাংলাদেশ | সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নুরুল হাসান (উইকেট রক্ষক), নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, আফিফ হোসেন, সৌম্য সরকার, ইয়াসির আলী, হাসান মাহমুদ, মোসাদ্দেক হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান এবং তাসকিন আহমেদ। |
জিম্বাবুয়ে | ক্রেগ এরভিন (অধিনায়ক), রেজিস চাকাভা (উইকেট রক্ষক), মিল্টন শুম্বা, ওয়েসলি মাধাভেরে, শন উইলিয়ামস, ব্র্যাড ইভান্স, সিকান্দার রাজা, রায়ান বার্ল, টেন্ডাই চাতারা, ব্লেসিং মুজারাবানি, এবং রিচার্ড এনগারাভা। |