ভারতের একটি ব্যাংকের অনুষ্ঠানের জন্য ঢাকায় এসেছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। এরপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন কলকাতার মহারাজ। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের সঙ্গে তার সম্পর্ক যে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তাই সৌরভের কন্ঠেও ফুটে উঠল সেই স্মৃতি বিজড়িত দিনগুলোর কথা। ঢাকায় পা রেখেই অতীত স্মৃতি রোমন্থন করলেন টিম ইন্ডিয়ার সাবেক অধিনায়ক এবং বিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি।
দীর্ঘ ২২ বছর আগের কথা। বাংলাদেশ – ভারত ঐতিহাসিক সেই টেস্ট ম্যাচের কথা ক্রিকেট প্রেমিদের ভোলার কথা নয়। ভারতের অধিনায়ক হিসেবে সেটিই ছিল সৌরভের প্রথম টেস্ট। আবার বাংলাদেশেরও সেটি ছিল অভিষেক টেস্ট। এত দিন পরে এসেও তাই সেই দিনের কথা ভুলতে পারছেননা সৌরভ। মেয়র কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে মাইক্রোফোন হাতে সৌরভও স্মরণ করলেন সেই সময়ের কথা।
সৌরভ বলেন, ” বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অন্যরকমের। এই দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সঙ্গে আমার নাম সব সময় জড়িয়ে থাকবে। এখানে আমার অনেক স্মৃতি আছে। আমার প্রথম টেস্ট অধিনায়কত্ব বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশেরও ওটা ছিল প্রথম টেস্ট ম্যাচ। আমার এখনও মনে আছে, নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়াম তখন হয়নি। সে সময় পুরোনো বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলা হয়েছিল। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ লিড নিয়েছিল। ইনিংস শেষে ড্রেসিংরুমে ঢুকে আমার মনে হয়েছিল, আমার অধিনায়কত্বের প্রথম টেস্ট হেরে যাব! পরে অবশ্য আমরা টেস্টটা জিতে যাই। ”
পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের সেই স্মরণীয় ওয়ানডে জয়ের ঘটনাও নাড়া দেয় সৌরভকে। তিনি বলেন, ” পাকিস্তানের বিপক্ষের ম্যাচের কথা আমার এখনও মনে আছে। ইনডিপেনডেন্ট কাপের ফাইনালে ৩১৫ রানের টার্গেটে আমরা জিতি। সে সময়ে ৩১৫ রান মানে বিশাল ব্যাপার। আর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ফ্ল্যাডলাইটে তখন এত আলো ছিল না। ফুটবলের আলোয় খেলা হয়েছিল আর শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকে হারিয়ে ম্যাচটা আমরাই জিতেছিলাম। ”
বাংলাদেশের মানুষ যে ক্রিকেটকে ভালোবাসে সে কথা বুঝেছিলেন সৌরভও। তিনি বলেন, ” আমার যতদূর মনে পড়ে, বাংলাদেশে আমি প্রথম আসি ১৯৮৯ সালে। অনূর্ধ্ব ১৯ দলের সঙ্গে এশিয়া কাপ খেলতে এসেছিলাম তখন। আর সেই থেকেই এদেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এরপর সর্বশেষ এদেশে আশা হয় টি – টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। আর সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে আমরা হেরে যাই। ”
বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সৌরভের সম্পর্ক অন্যরকম। ভারতের পশ্চিমবাংলার এই বাঙালি ক্রিকেটারের প্রতি বাংলাদেশের বাঙালিদের ভালোবাসাও কম নয়। এই প্রসঙ্গে সৌরভ বলেন, ” বাংলাদেশে যতবার আসি ততবারই ভালো লাগে। এদেশের মানুষ অসাধারণ। ভালোবাসা পাই, ভালোবাসা মানে অকৃত্রিম ভালোবাসা। আর সবথেকে বেশি যেটা ভালো লাগে সেটা হলো যখনই খেলা হয় গ্যালারি থাকে পূর্ণ। খেলার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা যে কতটা এতেই বোঝা যায়। ”
উল্লেখ্য মেয়র কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আসার জন্য কোনো অর্থ নেননি ভারতের সাবেক অধিনায়ক এবং বিসিসিআইয়ের সাবেক প্রধান। মেয়র কাপের প্রশংসা করে সৌরভ বলেন, ” এত ভালো একটা উদ্যোগ নেওয়ার জন্য মাননীয় মেয়রকে ধন্যবাদ জানাই। মাদক আসলে কোনো সমস্যার সমাধান না, সমাধান হলো খেলাধুলা করা। ছেলেমেয়েদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, তোমরা খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকো, লেখাপড়া করো, গানবাজনা করো। শিক্ষার সঙ্গে থাকো। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে এগুলোর বিকল্প নেই “।এদিন অনুষ্ঠানে সৌরভকে মেয়র কাপের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ঘোষণা দেন আয়োজকরা।