পাকিস্তান বনাম জিম্বাবুয়ে (ম্যাচ ২৪) – হাইলাইটস
শক্তির বিচারে পাকিস্তান জিম্বাবুয়ের চেয়ে কয়েকগুণ এগিয়ে। কিন্তু পার্থে দুদলের ম্যাচে যারা চোখ রেখেছেন, তারা হয়তো একপাক্ষিকতার কোনো আভাসই পাননি! পাকিস্তানের চোখে চোখ রেখে সমানে সমানে লড়েছে জিম্বাবুয়ে। রুদ্ধশ্বাস সেই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ১ রানে জিতেছে রোডেশীয়রা।
জিম্বাবুয়ের ১৩০ রানের অল্প পুঁজি, এরপর পেস তোপে পাকিস্তানের ধুঁকতে থাকা। শেষ দিকে টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে জয় তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে।
রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকে জিম্বাবুয়ের পেস তোপে পড়ে পাকিস্তান। ১৩ রানে বাবর আজম (৪), ২৩ রানে মোহাম্মদ রিজওয়ান (১৪) ও ৩৬ রানে ইফতিখার আহমেদের (৫) উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। এরপর ৪র্থ উইকেটে শাদাব খানের সঙ্গে ৫২ রানের জুটি গড়ে তোলেন শান মাসুদ। কিন্তু ব্যক্তিগত ১৭ রানে শাদাব সিকান্দার রাজার বলে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। একই ওভারের পরের বলে রাজা শিকার করেন হায়দার আলির উইকেটও।
অ্যাংকরিং করতে থাকা শান মাসুদ ফিরে যান সেই রাজার বলে। ৩৮ বলে দলীয় সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন এ ব্যাটার। এরপর হারের শঙ্কা জেঁকে বসে পাকিস্তান শিবিরে। এক পর্যায়ে শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১১ রান। উইকেটে তখন সেট ব্যাটার মোহাম্মদ নওয়াজ এবং মোহাম্মদ ওয়াসিম। বোলিংয়ে ছিলেন জিম্বাবুয়ান বোলার ব্রাড ইভান্স। প্রথম দুই বলেই ৭ রান নিয়ে নেন নওয়াজ এবং ওয়াসিম।
৪ বলে প্রয়োজন মাত্র ৪ রান। তৃতীয় বলেও নিলো ১ রান। প্রয়োজন ৩ বলে ৩ রান। নওয়াজ উইকেটে থাকার পরও চতুর্থ বলটি হলো ডট। রান নিতে পারলো না তারা। ২ বলে প্রয়োজন ৩ রান। পঞ্চম বলটিতেই তৈরি হলো চরম নাটকীয়তা। বাউন্ডারির লক্ষ্যে শট খেললেন তিনি। কিন্তু বলটা মিড অফের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়ে ক্রেগ এরভিনের তালুবন্দী হন নওয়াজ। আউট হয়ে গেলেন তিনি ১৮ বলে ২২ রান করে।
সুতরাং, শেষ বলে প্রয়োজন হলো ৩ রান। স্ট্রাইকে শাহিন আফ্রিদি। বড় শট খেলতে পারেন তিনিও। কিন্তু ব্র্যাড ইভান্সের হিসেবি বল বাউন্ডারি মারতে পারলেন না শাহিন। সোজা ব্যাটে লং অনে খেললেন। দৌড়ে ১ রান করার পর দ্বিতীয় রান নিতে গিয়েই রানআউট হয়ে গেলেন শাহিন। ১ রানে জয় পেলো জিম্বাবুয়ে।
পাকিস্তানের পক্ষে ওয়াসিম ১৩ বলে ১২ রান করে অপরাজিত ছিলেন। জিম্বাবুয়ের হয়ে ২৫ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট শিকার করেন সিকান্দার রাজা। এছাড়া ব্রাড ইভান্স ২টি এবং ব্লেসিং মুজারাবানি ও লুক জংওয়ে ১টি করে উইকেট তুলে নেন।
এর আগে নির্ধারিত ওভার শেষে ১৩০ রানের অল্প পুঁজি সংগ্রহ করেছিল জিম্বাবুয়ে। টস হেরে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ে প্রথম দুই ওভার শেষে তোলে ২৩ রান। ৪ ওভার শেষে বিনা উইকেটে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৮। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে ১৯ রান নিয়ে ব্যাট করতে থাকা এরভিনের উইকেট তুলে নেন হারিস রউফ। ওয়াসিম নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে তুলে নেন আরেক ওপেনার ওয়েসলি মাধভেরে’র (১৭) উইকেট।
২ উইকেট হারিয়ে রানের চাকা ধীর হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের। এরমধ্যে দশম ওভারে শাদাবের শিকারে পরিণত হন মিল্টন শুম্বা (৮)। এরপর ৩১ রানের জুটি গড়েন রাজা ও শন উইলিয়ামস। উইলিয়ামস প্যাভিলিয়নে ফেরেন শাদাবের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে। তার ব্যাট থেকে ২৮ বলে আসে ৩১ রান।
শাদাবের পরের বলে স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন রেজিস চাকাভা। বলের লাইন বরাবর শিকারির মতো চোখ রেখে সেই ক্যাচ এক হাতেই লুফে নেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। এরপর রাজার ব্যাটে আশা দেখছিল জিম্বাবুয়ে। তবে এদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে জ্বলে উঠতে পারেননি তিনি। ওয়াসিমের বলে স্কয়ার লেগে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ৯ রানে মাঠ ছাড়েন তিনি।
পাকিস্তানি পেসার পরের বলে লুক জংওয়ের উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত আর হ্যাটট্রিক হয়নি তার। শেষ দিকে রায়ান বার্ল ও ইভান্সের জুটি থেকে আসে ৩১ রান। ইভান্স আউট হন ১৫ বলে ১৯ রান করে। বার্ল করেন ১০ রান। পাকিস্তানের হয়ে ওয়াসিম সর্বাধিক ৪টি উইকেট তুলে নেন। এছাড়া শাদাব ৩টি এবং হারিস রউফ ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
পাকিস্তান বনাম জিম্বাবুয়ে এর স্কোরবোর্ড
জিম্বাবুয়ে – ১৩০/৮ (২০.০)
পাকিস্তান – ১২৯/৮ (২০.০)
ফলাফল – জিম্বাবুয়ে ১ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – সিকান্দার রাজা
পাকিস্তান বনাম জিম্বাবুয়ে ম্যাচের একাদশ
পাকিস্তান | বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেট রক্ষক), শান মাসুদ, শাদাব খান, ইফতিখার আহমেদ, হায়দার আলী, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, মোহাম্মদ নওয়াজ, শাহিন আফ্রিদি, নাসিম শাহ এবং হারিস রউফ। |
জিম্বাবুয়ে | ক্রেগ এরভিন (অধিনায়ক), রেজিস চাকাভা (উইকেট রক্ষক), মিল্টন শুম্বা, ওয়েসলি মাধভেরে, শন উইলিয়ামস, লুক জংওয়ে, সিকান্দার রাজা, রায়ান বার্ল, ব্র্যাড ইভান্স, ব্লেসিং মুজারাবানি, এবং রিচার্ড এনগারাভা। |