পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড (দ্বিতীয় টেস্ট)
তৃতীয় দিনের শেষে পেন্ডুলামের মতো দুলছিল মুলতান টেস্টের ভাগ্য। চতুর্থ দিনে অবশ্য জয়টা নিজেদের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছিল স্বাগতিক পাকিস্তান। তবে নিজেদের আনপ্রেডিক্টেবল চরিত্রের প্রদর্শণীতে ৩৮ রান তুলতেই শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে হেরে গেছে তারা। মুলতান টেস্টে পাকিস্তানকে ২৬ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজটি এক টেস্ট বাকি থাকতেই নিজেদের করে নিয়েছে সফরকারী ইংল্যান্ড।
২০০০–০১ মৌসুমের পর পাকিস্তানের মাটিতে এই প্রথম সিরিজ জিতল ইংল্যান্ড। পাকিস্তানে টানা দুই টেস্টও এই প্রথম জয়ের দেখা পেল তারা। অপরদিকে ১৯৫৯ সালের পর এই প্রথম ঘরের মাঠে টানা তিন টেস্ট হারল পাকিস্তান। গত মার্চে অস্ট্রেলিয়ার কাছে লাহোর টেস্টে হারের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে টানা দুই টেস্ট হারল পাকিস্তান।
১৭ বছর পর পাকিস্তান সফরে এসে দারুণ শুরু পেয়েছিল ইংল্যান্ড। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্ট জয়ের পর ২য় টেস্টে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে ১ম ইনিংসে ২৮১ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। পাকিস্তান অলআউট হয় ২০২ রানে। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭৫ রানে অলআউট হওয়ার পর জয়ের জন্য ৩৫৫ রানের লক্ষ্য পায় পাকিস্তান।
পাকিস্তান দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ করেছিল ৪ উইকেটে ১৯৮ রান সংগ্রহ করে। চতুর্থ দিন তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৫৭ রান। সৌদ শাকিল এক প্রান্ত ধরে রাখায় এক পর্যায়ে জয়ের পথেই হাঁটছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু ফাস্ট বোলার মার্ক উড শাকিল (৯৪) ও মোহাম্মদ নওয়াজকে (৪৫) তুলে নিয়ে ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরান। দলীয় ২৯১ রানে সপ্তম উইকেট (সৌদ শাকিল) পতনের পর পাকিস্তান আর জয়ের পথে থাকতে পারেনি।
৪র্থ দিন সকালের সেশনে শাকিল ও ফাহিম আশরাফের জুটি বেশিক্ষণ টেকেনি। মাত্র ৭ রান যোগ করে জো রুটের স্পিনের শিকার হয়ে ফেরেন ফাহিম (১০)। এরপর নওয়াজ ও শাকিলের ষষ্ঠ উইকেটে গড়া ৮০ রানের জুটিতে লড়াইয়ে ফিরেছিল পাকিস্তান। কিন্তু নিজের টানা দুই ওভারে (৯২তম ও ৯৪তম) নওয়াজ ও শাকিলকে তুলে নিয়ে ম্যাচটা সফরকারীদের দিকে ঘুরিয়ে দেন উড।
জেমস অ্যান্ডারসন, মার্ক উড ও ওলি রবিনসন মিলে পাকিস্তানের লেজের ব্যাটসম্যানদের তুলে নিয়ে দারুণ জয় এনে দেন ইংল্যান্ডকে। ৬৫ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন উড। এছাড়া অ্যান্ডারসন ও রবিনসন ২টি করে এবং জো রুট ও জ্যাক লিচ ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ইংলিশ ব্যাটারদের রীতিমত নাচিয়ে ছেড়ে ছিলনে পাকিস্তানী স্পিনার আবরার আহমেদ। অভিষেক টেস্টে তিনি একাই ৭ উইকেট শিকার করেন। সেই উইকেটগুলোও আবার টপঅর্ডারের শুরু থেকে একদম সাত নম্বর ব্যাটার পর্যন্ত। ২৪ বছর বয়সী এই লেগস্পিনারের জাদুতেই প্রথম দিন ২৮১ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। বাকী তিনটি উইকেট তুলে নেন জাহিদ মাহমুদ।
জবাবে পাকিস্তান ১ম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ২০২ রানে গুটিয়ে যায়। ইংলিশদের হয়ে লিচ সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া রুট ও উড ২টি করে এবং অ্যান্ডারসন ও রবিনসন ১টি করে উইকেট তুলে নেন। এরপর হ্যারি ব্রুকের সেঞ্চুরির সৌজন্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭৫ তুলতে সমর্থ হয় ইংল্যান্ড। ১৪ চার ও ১ ছক্কায়, ১৪৯ বলে ১০৮ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ব্রুক।
এছাড়া ওপেনার বেন ডাকেট ৭৯ ও ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস ৪১ রান করেন। ম্যান ইন গ্রিনদের পক্ষে ২য় ইনিংসেও আবরার আহমেদ সর্বাধিক ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন। এছাড়া জাহিদ ৩টি এবং মোহাম্মদ নওয়াজ ১টি উইকেট শিকার করেন।
ইংল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন হ্যারি ব্রুক। আগামী ১৭ই ডিসেম্বর (শনিবার) করাচিতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে এই দুই দল মুখোমুখি হবে।
পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড এর স্কোরবোর্ড
ইংল্যান্ড (১ম ইনিংস) – ২৮১/১০ (৫১.৪)
পাকিস্তান (১ম ইনিংস) – ২০২/১০ (৬২.৫)
ইংল্যান্ড (২য় ইনিংস) – ২৭৫/১০ (৬৪.৫)
পাকিস্তান (২য় ইনিংস) – ৩২৮/১০ (১০২.১)
ফলাফল – ইংল্যান্ড ২৬ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – হ্যারি ব্রুক
পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচের একাদশ
পাকিস্তান | বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেট রক্ষক), ইমাম-উল-হক, আবদুল্লাহ শফিক, আঘা সালমান, মোহাম্মদ নওয়াজ, সৌদ শাকিল, ফাহিম আশরাফ, মোহাম্মদ আলী, জাহিদ মাহমুদ, এবং আবরার আহমেদ। |
ইংল্যান্ড |
বেন স্টোকস (অধিনায়ক), ওলি পোপ (উইকেট রক্ষক), বেন ডাকেট, জো রুট, জ্যাক ক্রাওলি, হ্যারি ব্রুক, উইল জ্যাকস, জ্যাক লিচ, ওলি রবিনসন, মার্ক উড এবং জেমস অ্যান্ডারসন। |