কয়েক দিন আগে বিপিএলে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন পাকিস্তানের পেসার ওয়াহাব রিয়াজ। ৭ ম্যাচে ১৩ উইকেট শিকার করে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় নাম উঠেছিলো তার ।অন্যদিকে বিপিএল খেলার সময়েই পাঞ্জাবের ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার সুসংবাদ পান এই পেসার। দেশে ফিরেই শপথ নিয়ে পাঞ্জাবের এই ক্রীড়া মন্ত্রী এবার পাকিস্তানের ক্রিকেটে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছেন। এরপরেই তোলপাড় চলছে পাকিস্তানের ক্রিকেটে।
কিছুদিন আগে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে রমিজ রাজাকে সরিয়ে চেয়ারম্যান করা হয়েছে নাজাম শেঠিকে। তবে রমিজ রাজা দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে পাকিস্তান ক্রিকেটে স্বজনপ্রীতি করতেন বলে এবার মুখ খুলেছেন ওয়াহাব রিয়াজ।রমিজ রাজার সময়ে পাকিস্তান দলের প্রধান নির্বাচক ছিলেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। আর তাদের সময়ে দল বাছাই করার ক্ষেত্রে কয়েকজন ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স ভালো থাকা সত্ত্বেও দলে সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। ওয়াহাবের মতে এই ক্রিকেটারদের বাদ দেওয়ার পেছনে কোনো যুক্তি নেই।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ওয়াহাব রিয়াজ বলেন, ” আমাদের দল বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সঠিক নয়। ল্যাপটপ কেন্দ্রিক প্রধান নির্বাচকের ( মোহাম্মদ ওয়াসিম ) আমলে দল বাছাইয়ে প্রক্রিয়া সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ। শোয়েব মালিক, ইমাদ ওয়াসিম, সফররাজ আহমেদদের মতো খেলোয়াড়রা ভালো খেলেও দল থেকে বাদ যায়। ওদের বাদ পড়ার পেছনে যুক্তি নেই কোন। যদি পরিসংখ্যান দেখা হয় তবে, ২০২১ সালে টি – টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শোয়েব ও ইমাদ ভালো করেছে তবু তাদের দলের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। তাদের পারফরম্যান্স অজানা কারনে মূল্যায়ন করেনি নির্বাচকরা। অস্ট্রেলিয়ার ২০২২ টি – টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের দলে না রাখার কারন এখন পর্যন্ত জানিনা। ওদের ভুলটা কী নির্বাচকরা সেই ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যাও দেয়নি “
ওয়াহাব আরও বলেন, ” ক্ষমতার পালাবদল ব্যাপারটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমি জানি, রমিজ ভাই একটা সময়ে পিসিবিতে চূড়ান্ত ক্ষমতাধর ছিলেন। তবে তার সময়ে প্রধান নির্বাচক আমাদের ( খেলোয়াড় ) সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন না। শুধু তার চাওয়া মেনে তার সব কথা মেনে চললেই তিনি শুধু সবার সাথে যোগাযোগ রাখতেন । অন্য দেশে এভাবে দল বাছাই হয় কিনা জানা নেই। পাকিস্তানের ক্রিকেটে যারা নিজেদের অবস্থানের পক্ষে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় না। যে কারনে মাঝেমধ্যে পাকিস্তানের ক্রিকেট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। ”
এ সময় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করে ওয়াহাব রিয়াজ আরো বলেন, ” আমাদেরর দেশের ক্রিকেট স্বজনপ্রীতির ব্যাপারটা ওপেন সিক্রেট। পারফরম্যান্স ঠিক থাকলে, বয়স বেশির অজুহাত দেওয়াটাও উচিৎ নয়। বয়স একটা সংখ্যা মাত্র, সব সময় গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিয়মটা সবার জন্যই সমান হওয়া উচিত। মিসবাহ ভাইয়ের কথাই বিবেচনা করুন , বয়সকে একটা সংখ্যা বানিয়ে তিনি ৪০ বছরের পরেও ক্রিকেট খেলেছেন। আমার মতে, ৩০ বছরের পর একজন ক্রিকেটার নিজের সেরা সময়ের দেখা পায়। ভারতের দিকে তাকান, অনেক উদাহরণ পাবেন। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা কিন্তু ৩০ এর বেশি বয়স নিয়েও পারফর্ম করছে। বয়স দিয়ে তাই সব সময় সবকিছু বিবেচনা করা যায়না।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে পাকিস্তানের জার্সিতে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন ওয়াহাব। তখন দুটি ওয়ানডেতে ভালো করেও দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। এরপর দীর্ঘ দুই বছর দল থেকে বাইরে আছেন তিনি। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত টি – টোয়েন্টিতে তিনিই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ( ৩০৭ )। সম্প্রতি টি – টোয়েন্টি ক্রিকেটে নজিরও গড়েছেন পাকিস্তানের এই পেসার। টি – টোয়েন্টিতে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। এবার চলতি বছর ভারতের মাটিতে একদিনের বিশ্বকাপ দিয়ে আবার দলে ফিরতে চাইছেন এই পাকিস্তানি পেসার।তবে সেটা সম্ভব হবে কিনা সেটা হয়ত সময়েই বলবে।