পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় এক অর্জন। যে অর্জন কেবল বাংলাদেশেরই। নিজস্ব অর্থায়নে খরস্রোতা পদ্মার বুকে ৬ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। গৌরবময় এই সেতু নিয়ে কথা বলেছেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল এবং সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম নিজের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে পদ্মা সেতু নিয়ে একটি ভিডিও দিয়েছেন। ভিডিওতে তামিম বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু মানে আমরা বাংলাদেশি মানুষরা যদি একসঙ্গে কিছু করতে চাই, আমরা সবই পারি।’
এছাড়া ভিডিওতে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বর্তমান তুলে ধরা হয়। ভিডিওতে বলা হয়, ‘আমাদের বলা হলো বাংলা ভাষা থাকবে না, ৩০ কোটি মানুষ আজ বাংলায় কথা বলে। ১৯৬৬ সাল, ছয় দফা মানবে না। জ্বালিয়ে দিলাম আন্দোলনের আগুন। ১৯৬৯ সালে আমাদের শেখ মুজিবুর রহমান জেলে, ওরা ছাড়বে না। কিন্তু বাধ্য করলাম ছাড়তে।’
ভিডিওতে আরো বলা হয়, ‘১৯৭০ সালের নির্বাচনে জিতলাম। ওরা বলল আমাদের ক্ষমতা দেবে না। ৭১ এর ৭ই মার্চ, আঙুল তুলে বললাম, দাবায়ে রাখতে পারবা না। ওরা বলল স্বাধীনতা দেবে না। যুদ্ধ হলো। তাড়িয়ে দিলাম, জন্ম নিলাম বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালে নৃশংসভাবে হত্যা হলেন জাতির পিতা। কিন্তু আজ কোটি বাঙালির মনেপ্রাণে তিনি প্রবলভাবে জীবিত।’
‘বলা হলো, বাংলাদেশ নাকি তলাবিহীন জুড়ি। কিন্তু আজ আমাদের মাথাপিছু আয় অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে। ওরা বলেছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে না। আজ গোটা পৃথিবী বলে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের মানুষ। ১৫ বছর ধরে শুনছি পদ্মা সেতু হবে না, সবাই মুখ ফিরিয়ে নিল। কিন্তু বাংলাদেশ পারল। একজোট হলে আমরা সবই পারি।’ এই ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে তামিম লিখেছেন, ‘অসীম সাহসের আরেক নাম পদ্মা সেতু।’
এই পদ্মা সেতু নির্মানের ফলে দেশের দক্ষিণাচলের মানুষের জীবন অনেক সহজ হবে বলে মনে করেন মাশরাফি। একইসাথে মানুষের সমস্ত দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে, সেসব সমাধান হয়ে গেছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। দেশের মানুষের জন্য পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এই সেতুকে স্বপ্ন বলে আখ্যায়িত করলেন সাবেক টাইগার অধিনায়ক।
নিজের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে মাশরাফি লিখেছেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য পদ্মা সেতু কতটা জরুরি, ওই পথে চলাচলের অভিজ্ঞতা ছাড়া তা আসলে বোঝা খুবই কঠিন। দুটি ঈদের কথা উল্লেখ না-ই করলাম, তখন তো গোটা দেশের মানুষই নিউজে দেখতে পায় কতটা কষ্ট করে মানুষ নদী পার হয়। কিন্তু শীতকালে যে কী অবস্থা হয়, সেটা কেবল তারাই বোঝে, যাদের এই অভিজ্ঞতা হয়। তার ওপর নানা সময়ে নিম্নচাপ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে তো কথাই নেই, সারা রাত ফেরি বন্ধ।
মাশরাফি তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন ” বছরজুড়ে নানা সময়ে গাড়ির সিরিয়াল যখন শুরু হয়, বিকেল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত ঘাটে বসে থাকতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। শতশত মালবাহী ট্রাক থাকে অপেক্ষায়, কাঁচামাল তো ঘাটেই পঁচে যায়, এসব মোটামুটি নিয়মিত চিত্র। এরপর যদি নদীর স্রোতে ঘাট ভেঙে যায়, যন্ত্রণা তখন আরও বেড়ে যায়।
টাইগারদের সাবেক ক্যাপ্টেন আরো লিখেছেন ” সবচেয়ে বেদনাদায়ক ব্যাপার হয়, যখন কোনো মুমূর্ষু রোগী নদী পার হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকে। প্রতিটি মিনিট তখন মনে হয় অনন্তকাল। ওই পরিবার তখন কতটা অসহায় থাকে, কেউ ওই অবস্থায় না পড়লে বোঝা দায়। ঘাটেই রোগী মারা গেছে, ঢাকায় এনে চিকিৎসা করানো যায়নি, এরকম নজির আছে অনেক। প্লেনে বা হেলিকপ্টারে রোগী আনার সামর্থ্য কজনেরই বা আছে!
এছাড়াও আরও কত যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, এই পথের নিয়মিত যাত্রীরাই কেবল বোঝে। সেই যন্ত্রণাময় দিনগুলি শেষ হতে চলেছে। অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে, অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। কোটি কোটি মানুষের কাছে এটা স্বপ্নের চেয়েও বড় কিছু। অনেকে কখনও কল্পনাও করতে পারেননি, জীবদ্দশায় পদ্মার ওপর সেতু দেখতে পাবেন। এটা স্রেফ ইট-সিমেন্টের সেতু নয়, এই অঞ্চলের মানুষের কাছে এটা অনেক আবেগ-অনুভূতির প্রতিশব্দ।
মাশরাফি আরো লিখেছেন ” যুগ যুগ ধরে চলে আসা এসব সমস্যার সমাধান তো এখন হবেই, এই অঞ্চলে এখন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে, বেকারত্ব দূরীকরণে তা ভূমিকা রাখবে, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা বদলে যাবে। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে আমার রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রয়োজন পড়ে না। সমস্ত রাজনীতির উর্ধ্বে গিয়ে সবার থেকেই একটি ধন্যবাদ অন্তত আপনার প্রাপ্য।’