দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম বাংলাদেশ (ম্যাচ ২২) – হাইলাইটস
খর্ব শক্তির নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ পেল বড় হারের তিক্ত স্বাদ। বৃহস্পতিবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি) সুপার টুয়েলভের ম্যাচে প্রোটিয়াদের কাছে ১০৪ রানে হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল। দক্ষিণ আফ্রিকার দেয়া ২০৬ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে টিম টাইগার্স অলআউট হয়ে গেছে মাত্র ১০১ রানে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিশ্চিত জয়ের ম্যাচে বৃষ্টিতে পয়েন্ট ভাগাভাগির পর বাংলাদেশকে ১০৪ রানে উড়িয়ে টুর্নামেন্টে নিজেদের সম্ভাবনা আরও পাকাপোক্ত করল চোকার্সরা। এ নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনবার এবং সর্বমোট আটবারের দেখায় প্রতিবারই জয় পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত সুইংয়ে পরাস্ত হয়ে সাজঘরে ফিরেন প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের গ্লাভসে ধরা পড়েন বাভুমা (২)। দলীয় ২ রানে প্রথম উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা।
এরপর বাংলাদেশি বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে উঠেন প্রোটিয়া ব্যাটার কুইন্টন ডি কক এবং রাইলি রুশো। কোন বোলারই বল হাতে সুবিধা করতে পারছিলেন না। এমন সময়ে ঝরঝরিয়ে নামে বৃষ্টি। ৫.৩ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ৬০ রান।
কিছুক্ষণ পর খেলা শুরু হলে ১০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৯০ রান। অবশেষে ১৫তম ওভারে আফিফ হোসেনকে বোলিংয়ে আনেন সাকিব আল হাসান। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে বিধ্বংসী জুটি ভাঙেন পার্টটাইম অফস্পিনার আফিফ।
এর আগেই অবশ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রেকর্ড জুটি হয়ে গিয়েছিল। ৮৫ বলে ১৬৩ রানের জুটিতে ইতিহাস গড়েছেন রাইলি রুশো এবং কুইন্টন ডি কক। ৭ চার ও ৩ ছক্কায়, ৩৮ বলে ৬৩ রানের ইনিংস খেলা ডি কককে লংঅফে সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানান আফিফ। ত্রিস্টান স্টাবসকে ৭ রানের বেশি করতে দেননি সাকিব, তুলে মারতে গিয়ে প্রোটিয়া এই ব্যাটার বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন।
তবে রুশো টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। ৫২ বলে তিনি ছুঁয়েছেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার। এর আগে ইন্দোরে ভারতের বিপক্ষে ৪৮ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন রুশো। বিধ্বংসী এই ব্যাটারকে অবশেষে ১৯তম ওভারে ফেরান সাকিব। ডাউন দ্য উইকেট গিয়ে কভারে সহজ ক্যাচ তুলে দেন রুশো। তাঁর ৫৬ বলে ১০৯ রানের ইনিংসে ছিল ৭ চার ও ৮ ছক্কার মার।
তবে শেষ ৫ ওভারে বেশ ভালো বোলিং করেছিল বাংলাদেশ। ৩০ রান দিয়ে তুলে নিয়েছে ৩ উইকেট। কিন্তু রুশোর সেঞ্চুরিতে ঠিকই রানপাহাড়ে চড়ে বসে দক্ষিণ আফ্রিকা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান তোলে টেম্বা বাভুমার দল।
প্রথম ওভারে ২১ রান খরচ করলেও পরের দুই ওভারে আর মাত্র ১২ রান দিয়ে ২টি উইকেট তুলে নেন টাইগার দলপতি সাকিব আল হাসান। তাসকিন ৩ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে তুলে নেন ১ উইকেট। এছাড়া ১টি উইকেট নেন হাসান মাহমুদ। মোস্তাফিজ উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে দেন মাত্র ২৫ রান।
তবে বিশাল এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। কাগিসো রাবাদার করা প্রথম ওভারেই চড়াও হন দলের দুই ওপেনার। নাজমুল হোসেন চার মেরে হাত খোলার পর সৌম্য ওভারের শেষ দুই বলে টানা দুইটি ছক্কা হাঁকান। রাবাদা প্রথম ওভারেই দেন ১৭ রান। মনে হচ্ছিল প্রোটিয়া ব্যাটাররা যেখানে শেষ করেছেন সেখান থেকেই শুরু করেছেন টাইগার ব্যাটাররা।
তবে মোমেন্টাম বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি ওপেনাররা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আনরিখ নর্কিয়ার বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ৬ বলে ১৫ রান করে ফিরে গেছেন সৌম্য। টাইগার এ ব্যাটারের বিদায়ের পর পথ হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশও। দলীয় ২৬ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারানোর পর ২৭ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেটের পতন।
নর্কিয়ার গতির কাছে পরাস্ত হন নাজমুল। আড়াআড়ি মারতে গিয়ে উড়ে যায় তাঁর স্টাম্প। ৪ বল ও ১ রানের মাথায় ফিরেন দুই ওপেনার। সাজঘরে ফেরার আগে নাজমুল করেছেন ৯ বলে ৯ রান।
প্রোটিয়া এই ফাস্ট বোলারের পর রাবাদা, শামসি এবং কেশব মহারাজদের কাছে পরাস্ত হয় বাকি ব্যাটাররা। শেষ পর্যন্ত ১৬.৩ ওভারে ১০১ রানেই গুটিয়ে যায় টাইগার’রা। বাংলাদেশের হয়ে ১টি করে চার ও ছক্কায়, ৩১ বলে সর্বোচ্চ ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন লিটন দাস। এছাড়া সৌম্য (১৫), মেহেদী হাসান (১১) ও তাসকিন (১০) ছাড়া আর কোন ব্যাটার দুই অঙ্কের স্কোর স্পর্শ করতে পারেননি।
প্রোটিয়া ফাস্ট বোলারের পর রাবাদা, শামসি এবং কেশব মহারাজদের কাছে পরাস্ত বাকি ব্যাটাররা। শেষ পর্যন্ত ১৬.৩ ওভারে ১০১ রানেই গুটিয়ে যায় টাইগার’রা। বাংলাদেশের হয়ে ১টি করে চার ও ছক্কায়, ৩১ বলে সর্বোচ্চ ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন লিটন দাস। এছাড়া সৌম্য (১৫), মেহেদী হাসান (১১) ও তাসকিন (১০) ছাড়া আর কোন ব্যাটার দুই অঙ্কের স্কোর স্পর্শ করতে পারেননি।
ব্যাটিংয়ে রুশো এবং ডি ককের ঝড়ের পর বল হাতে গতির ঝড় তুলেছেন আনরিখ নর্কিয়া। ৩.৩ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট শিকার করেছেন এ পেসার। এছাড়া তাবরিজ শামসি ৩টি এবং কেশব মহারাজ ও কাগিসো রাবাদা ১টি করে উইকেট তুলে নেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম বাংলাদেশ এর স্কোরবোর্ড
দক্ষিণ আফ্রিকা – ২০৫/৫ (২০.০)
বাংলাদেশ – ১০১/১০ (১৬.৩)
ফলাফল – দক্ষিণ আফ্রিকা ১০৪ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – রাইলি রুশো
দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম বাংলাদেশ ম্যাচের একাদশ
দক্ষিণ আফ্রিকা | টেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), কুইন্টন ডি কক (উইকেট রক্ষক), রাইলি রুশো, ডেভিড মিলার, এইডেন মার্করাম, ট্রিস্টান স্টাবস, কেশব মহারাজ, ওয়েন পার্নেল, কাগিসো রাবাদা, তাবরিজ শামসি এবং আনরিখ নর্কিয়া। |
বাংলাদেশ | সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নুরুল হাসান (উইকেট রক্ষক), নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, আফিফ হোসেন, সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন, হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ এবং মোস্তাফিজুর রহমান। |