বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ, পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের মধ্যে ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ৫ ম্যাচ সিরিজের ৫ম ও শেষ টি-টোয়েন্টি গতকাল এবং আজ যথাক্রমে মাঠে গড়িয়েছে। ম্যাচগুলোর আকর্ষণীয় ঘটনা সম্পর্কে জানতে নিবন্ধটি একটি ঝলক দেখে নিই।
জিম্বাবুয়ে বনাম বাংলাদেশ (১ম – ওয়ানডে)
জিম্বাবুয়ের মাটিতে প্রত্যাশিত জয় দিয়েই ওয়ানডে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে বিপদে পড়লেও লিটন দাসের সেঞ্চুরিতে ২৭৬ রান সংগ্রহ করে সফরকারীরা। এরপর বল হাতে বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান ৫ উইকেট শিকার করে দলকে ১৫৫ রানের বড় জয় এনে দেয়।
শুক্রবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর দলের হাল ধরেন লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ। পঞ্চম উইকেট তারা ৯৩ রানের জুটি গড়েন। এক ছক্কায়, ৫২ বলে ৩৩ রান করে সাজঘরে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের ৪০তম ওভারে ৮ বাউন্ডারিতে, ১১০ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। এরপরেই অবশ্য ১০২ রানে তিনি আউট হয়ে যান।
শেষে আফিফ হোসেন (৪৫) এবং মেহেদী হাসান মিরাজের (২৫) ইনিংসের সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৭৬ রান তোলে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন লুক জঙ্গুয়ে। ২টি করে উইকেট তুলে নেন ব্লেসিং মুজারাবানি ও রিচার্ড নগারাভা।
রান তাড়ায় নেমে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের সামনে বিপদে পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে। দলীয় ৪৯ রানের মধ্যে প্রথম ৩ উইকেট তুলে নেয় টাইগারদের তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও শরিফুল ইসলাম। এরপর সাকিবের স্পিন ঘূর্ণিতে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি স্বাগতিকরা। তবে রেজিস চাকাভা (৫৪) দলকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে যোগ্য সঙ্গীর অভাবে স্কোর আর বড় করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ২৮.৫ ওভারে ১২১ রানে অল-আউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের হয়ে ৯.৫ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান এবং সেই সাথে বাংলাদেশের হয়ে তিন ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর মালিক এখন তিনি।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
স্কোরবোর্ড:
বাংলাদেশ – ২৭৬/৯ (৫০.০)
জিম্বাবুয়ে – ১২১/১০ (২৮.৫)
ফলাফল – বাংলাদেশ ১৫৫ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দি ম্যাচ – লিটন দাস
ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তান (১ম – টি20)
নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে হওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১ রানের দারুণ জয় পেয়েছে পাকিস্তান। ইংল্যান্ডের হয়ে এদিন ৪২ বলে সেঞ্চুরি করেছেন লিয়াম লিভিংস্টোন। এতেও পাকিস্তানের জয় আটকাতে পারেনি স্বাগতিকরা।
টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ইংলিশরা। ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান আর অধিনায়ক বাবর আজমের দাপুটে ব্যাটিংয়ে তাদের স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২৩২। ১৪.৪ ওভারে ওপেনিং জুটি থেকেই আসে ১৫০ রান! উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান রিজওয়ান ৮ চার ১ ছক্কায়, ৪১ বলে ৬৩ আর বাবর আজাম ৮ চার ৩ ছক্কায়, ৪৯ বলে ৮৫ রানের ইনিংস খেলেন। এরপর মকসুদ (১৯), ফখর (২৬) আর হাফিজের (২৪) ছোট ছোট অবদানে রানের পাহাড় গড়ে পাকিস্তান। টম কারান ইংলিশদের পক্ষে সর্বোচ্চ ২ উইকেট তুলে নেন।
রান তাড়ায় নেমে দলীয় ১২ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। ৪২ রানে দ্বিতীয়টি। এমন সময় উইকেটে আসেন লিভিংস্টোন। এসেই বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ৬ চার ও ৯ ছয়ে, ৪২ বলে তুলে নেন ৬ ম্যাচ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ১৭তম ওভারে ব্যাক্তিগত ১০৩ রানে আউট হন লিভিংস্টোন। ওই ওভার শেষে জয়ের জন্য ১৮ বলে ৪৪ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। শেষের হিসাবটা আর মেলাতে পারেনি বাকি ব্যাটসম্যানরা। ৩১ রানের দারুণ জয় তুলে নিয়ে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে যায় পাকিস্তান। ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন শাহীন আফ্রিদি।
স্কোরবোর্ড:
পাকিস্তান – ২৩২/৬ (২০.০)
ইংল্যান্ড – ২০১/১০ (১৯.২)
ফলাফল – পাকিস্তান ৩১ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দি ম্যাচ – শাহীন আফ্রিদি
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম অস্ট্রেলিয়া (৫ম – টি20)
টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছয় উইকেট হারিয়ে ১৯৯ রানের বড় স্কোর সংগ্রহ করে। জবাবে জয়ের সম্ভাবনা জাগালেও শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৮৩ রানে থেমে যায় অজিদের ইনিংস। ক্যারিবীয়রা পায় ১৬ রানের জয়। সেই সাথে পাঁচ ম্যাচের সিরিজটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪-১ ব্যবধানে জয়ী হয়।
সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন ওপেনার এভিন লুইস। দলীয় ৪০ রানে, ১৬ বলে ১২ রান করে প্রথম সাজঘরে ফিরেন আন্দ্রে ফ্লেচার। এরপর ‘দ্য ইউনিভার্স বস’ ক্রিস গেইল জ্বলে উঠেছিলেন। তবে ২ চার ও ২ ছক্কায়, ৭ বলে ২১ রান করে তিনিও প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। অধিনায়ক নিকোলাস পুরান খেলেন ১৮ বলে ৩১ রানের ইনিংস। আর ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়ে এভিন লুইস ৪ চার ও ৯ ছক্কায়, ৩৪ বলে ৭৯ রান করেন। অজিদের হয়ে অ্যান্ড্রু টাই সর্বাধিক ৩টি উইকেট শিকার করেন।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৯ রানেই জস ফিলিপেকে (০) হারায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ সর্বোচ্চ ২৩ বলে ৩৪ রান করেন। মিচেল মার্শ (৩০) ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান ত্রিশের ঘর ছুঁতে পারেননি। ব্যাট হাতে মাত্র ১ রান করলেও বল হাতে ঝলসে ওঠেন আন্দ্রে রাসেল। ৪ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। শেলডন কটরেলও ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮৩ রানে আটকে যায় অজিদের ইনিংস। ১৬ রানের জয় পায় উইন্ডিজ। বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন এভিন লুইস।
স্কোরবোর্ড:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ – ১৯৯/৮ (২০.০)
অস্ট্রেলিয়া – ১৮৩/৯ (২০.০)
ফলাফল – ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দি ম্যাচ – এভিন লুইস
প্লেয়ার অফ দি সিরিজ – হেইডেন ওয়ালশ
ব্যাট ও বলের কিছু দুর্দান্ত লড়াই নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চলছে। ক্রিকেটের আরও সর্বশেষ আপডেটের জন্য Baji –র সাথেই থাকুন!