BJ Sports – Cricket Prediction, Live Score

ক্রিকেটের সৌন্দর্য ” মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রী ” এবিডি ভিলিয়ার্স

Abraham Benjamin de Villiers is a former South African international cricketer.

Abraham Benjamin de Villiers is a former South African international cricketer.

১৯৮৪ সালে প্রভিন্স, প্রোটেরিয়ায় জন্মেছিল ছোট্ট শিশুটি বাবা-মা নাম রেখেছিলেন আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স। সেদিন কে-ই বা ভেবেছিলো, সেই ছোট্ট শিশুটিই হবেন দক্ষিণ আফ্রিকান ডানহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। একইসাথে রাইট আর্ম ফাস্ট মিডিয়াম বোলার। ‘দ্য গ্রেট অব ক্রিকেট হিস্ট্রি।

অন দ্য ট্র্যাক, ইন এ্যাটাক অর বিহাইন্ড দ্য উইকেট! সবখানেই সুপারম্যান একজন এবিডি ভিলিয়ার্স। ২০০৪ থেকে ২০১৮, দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহু রেকর্ড ভাঙা-গড়ার মহা কারিগর ডি ভিলিয়ার্স। যার কব্জির মোচড়ে কুপোকাত দুর্লভ সব ইয়র্কার, যার নান্দনিক পুল শট গ্যালারী মাতিয়ে তুলে আরো একবার। উইকেটে একজন ডি ভিলিয়ার্সের শৈল্পিক রুপে বিমোহিত গোটা ক্রিকেট জগৎ। মুগ্ধতায় মাতিয়ে রাখেন ব্যাট-বলের আঙিনা।

উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু। তবে বেশিরভাগ সময়েই কেবল ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন তিনি। ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে ব্যাটিং করার দক্ষতা সম্পন্ন এই তারকা মূলত মিডল অর্ডারেই কাটিয়েছেন ক্যারিয়ারের সিংহভাগ। আধুনিক ক্রিকেটের যুগে অন্যতম উদ্ভাবনী এবং ধ্বংসাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে সমাদৃত দক্ষিণ আফ্রিকান গ্রেট এবি ডি ভিলিয়ার্স। বিশেষত বাইশ গজে আকর্ষণীয় এবং দুর্লভ সব শটের জন্য আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয় তাকে।

১৭ ডিসেম্বর, ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। টেস্ট ক্যাপ নম্বর ২৯৬। প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেছিলেন ২০০৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারী, একই দলের বিপক্ষে (ইংল্যান্ড)। ক্যাপ নম্বর ৭৮ (ওয়ানডে)। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০০৬ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারী। ক্যাপ নম্বর ২০ (টি-টোয়েন্টি)। প্রোটিয়াদের জার্সি গায়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ২০১৮ সাল পর্যন্ত, দীর্ঘ ১৫ বছর!

টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি, সবমিলিয়ে মোট আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ৪২০টি। ১১৪ টেস্ট, ২২৮ ওয়ানডে এবং ৭৮ টি-টোয়েন্টি। গড় কিংবা স্ট্রাইকরেট, সমানতালে হেলদি। সাদা পোশাকে ১৯১ ইনিংস থেকে ৫৫.৬৬ গড়ে রান করেছেন ৮৭৬৫। অল্পের জন্য দশ হাজারী ক্লাবে প্রবেশের আক্ষেপ থেকে গেলো একদিনের ক্রিকেটে। ব্যাট হাতে করেছেন ৯৫৭৭ রান। শ’য়ের উপর স্ট্রাইকরেটে গড়টা ৫৩.৫! বিধ্বংসী এই ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি রান ২৬.১২ গড়ে ১৬৭২। ব্যাটিং করেছেন ১৩৫.১৭ স্ট্রাইকরেট নিয়ে।

গোটা ক্যারিয়ারে ৪৭ টি শতক হাঁকিয়েছেন ভিলিয়ার্স। সাদা পোশাকে সর্বোচ্চ ২৭৮ রানে ২২টি এবং একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ১৭৮ রানে ২৫টি। অর্ধশতকে ছুঁয়েছেন সেঞ্চুরি। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন মোট ১০৯ বার। পৃথকভাবে টেস্টে ৪৬, ওয়ানডেতে ৫৩ এবং শর্টার ভার্সনে ১০। পুরো আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২০০৪ টি চারের বিপরীতে ছক্কা আছে ৩২৮টি। নট আউট ছিলেন ৬৮ বার।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কেমন ছিলেন বোলার ডি ভিলিয়ার্স? এবার একটু সেদিকে চোখ দেওয়া যাক। জাতীয় দলের জার্সিতে তেমন একটা বল হাতে নেওয়া হয়নি তার। টেস্টে পাঁচ ইনিংস এবং ওয়ানডেতে নয় ইনিংসে বল করেছেন। উইকেট সংখ্যা ৯টি। দুই সংস্করণে ৩৯৬ বল থেকে রান খরচ করেছেন ৩০৬। পার্টটাইমার হিসেবে ইকোনমি রেটটাও খারাপ বলার সুযোগ নেই। টেস্টে ৩.০৬ আর ওয়ানডেতে ৬.৩১। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ১৫ রানে দুই উইকেট শিকার করেছেন। পাঁচ উইকেট পাননি একবারও।

আন্তর্জাতিক সিডিউলের ফাঁকে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলেছেন বিশ্বজুড়ে। আইপিএল, বিপিএল, পিএসএল, সিপিএল কিংবা বিগব্যাস। এমন কোনো লীগ নেই, যেখানে তার বিচরণ নেই। আইপিএল ২০০৮-২০১০ মৌসুমে দিল্লী ডেয়ার ডেভিলস এর হয়ে খেলেছিলেন তিনি। এরপর পাড়ি জমান রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুতে। ২০১১ থেকে এখন পর্যন্ত এটিই তার আইপিএল দল। এছাড়া বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লীগের মধ্যে বার্বাডোজ ট্রাইডেন্স, থসন স্পার্টান্স, রংপুর রাইডার্স, লাহোর কালান্দার্স, মিডল সেক্স এবং ব্রিসবেন হেট এর হয়ে খেলেছেন ডি ভিলিয়ার্স।

কুড়ি ওভারের এসব টুর্নামেন্টে বোলারদের সামনে আতঙ্কের নাম এবিডি। প্রতিপক্ষকে একাই ধুমড়ে মুচড়ে দিতে সক্ষম এ ব্যাটসম্যানের আইপিএল রান ১৫৪ ম্যাচে ৪৩৯৫। আছে ৩টি শতক এবং ৩৩টি অর্ধশতক। গড় ৩৯.৯৫, স্ট্রাইকরেট ১৫১.২৪। সর্বোচ্চ ইনিংস ১৩৩ রানের। এছাড়া বৈশ্বিক সব লীগে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছড়ানোর জুড়ি মেলা ভার এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের ব্যাটে।

টেস্ট এবং ওয়ানডে উভয় ফরম্যাটেই ৮ হাজারেরও বেশি রান করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। যা খুব কম ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজনই আছেন যার উভয় ফর্মের ব্যাটিং গড় পঞ্চাশেরও বেশি। মাত্র ৩১ বলে দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ডও তার। একদিনের ক্রিকেটে দ্রুততম ৫০ এবং ১৫০ রানের রেকর্ডও ভিলিয়ার্সের দখলে। ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিন তিন বার আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। ২০১৯ সালে ‘উইসডেন ক্রিকেটার অব দ্য ডিকেড’ নির্বাচিত হয়েছেন এবিডি।

একাধারে তিন ফরম্যাটেই দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। তবে বেশ কয়েকটি চোটের কারনে স্বেচ্ছায় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন এবিডি। ২০১৭ সালে তিনি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে জাতীয় দলের অধিনায়কের পদ থেকে অব্যহতি নেন এবং ২০১৮ সালের মে মাসে সব ধরণের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ‘গুড বাই’ জানিয়েছেন। তবে দর্শকরা এখনো মনে রাখে তাদের প্রিয় ৩৬০ ডিগ্রীর ক্রিকেটারকে।

Exit mobile version