ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম বাংলাদেশ (প্রথম টেস্ট – ১ম দিন)
অ্যান্টিগা টেস্টে সফরকারী বাংলাদেশের ১০৩ রানের জবাবে প্রথম দিন শেষে ৪৮ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৯৫ রান তুলেছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রেইগ ব্রেথওয়েট ১৪৯ বলে ৪২ এবং এনক্রুমা বোনার ৪৩ বলে ১২ রানে অপরাজিত আছেন। স্বাগতিকরা এখনও ৮ রানে পিছিয়ে আছেন।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই বিপদে ছিল বাংলাদেশ। ক্যারিবীয় পেসার কেমার রোচ ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আঘাত হেনেছেন। বাইরের বল অযথা খোঁচা দিয়ে স্লিপে ক্যাচ হয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয় (১ বলে ০)। টেস্টে ১১ ইনিংসে এই নিয়ে ৬ষ্ঠ বারের মত শূন্য রানে আউট হলেন তিনি।
এক ওভার বিরতি দিয়ে এসে রোচ তুলে নিয়েছেন টপঅর্ডারের আরেক ব্যাটার নাজমুল হোসেন’কে। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হওয়া শান্তও করেছেন ৫ বলে শূন্য রান । ফলে ৩ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
এরপর ব্যাট করতে নেমে তামিমের সঙ্গে জুটি বাধার চেষ্টা করেছিলেন মুমিনুল হক। কিন্তু জেইডেন সিলসের ডেলিভারি তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে টানা আট ইনিংসে দশের নিচে আউট হলেন মুমিনুল।
টাইগারদের আত্মাহুতির মিছিলে ভরসা হয়ে ছিলেন তামিম ইকবাল আর লিটন দাস। ১৬ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে অনেকটা সময় দুশ্চিন্তামুক্তও রেখেছিলেন তারা। এই দুইজন বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ৫৩ বলে ২৫ রানের জুটি গড়েছিলেন। কিন্তু ৫ বলের ব্যবধানে এই দুই ব্যাটারকে হারিয়ে আবারও বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
আলজারি জোসেফের লেগ সাইডের বল খেলতে গিয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হয়েছেন তামিম। ৪ বাউন্ডারিতে, ৪৩ বলে তিনি ২৯ রান করেন। এর পরের ওভারে জোড়া আঘাত হানেন কাইল মায়ার্স। লিটন দাস ৩৩ বলে ১২ করে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষকের কাছে। ইয়াসির আলি রাব্বির বদলে সুযোগ পাওয়া নুরুল হাসান এক বল পরই এলবিডব্লিউ (০) হন।
এরপর মেহেদী হাসানকে নিয়ে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান জুটি গড়ে তোলেন। মেহেদী অবশ্য নিজে রান করতে পারেননি। তবে অনেকটা সময় সাকিবকে সঙ্গ দিয়েছেন। ২২ বলে ২ করে আউট হন এই অলরাউন্ডার।
৬ উইকেটে ৭৬ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। বিরতি থেকে ফিরে ২৯তম ওভারে আলজারি জোসেফকে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৪৪ রানে পৌঁছে যান সাকিব। তাঁর সঙ্গী তখন এবাদত হোসেন। এবাদত অনেকটা সময় পাশে থাকাতেই ক্যারিয়ারের ২৮তম ফিফটি তুলে নিতে পেরেছেন সাকিব।
৬ চার ও ১ ছক্কায়, ৬৭ বলে ৫১ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরেন সাকিব। ফলে ৩২.৫ ওভারে মাত্র ১০৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এবাদত ১১ বলে ৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেডন সিলস এবং আলজারি জোসেফ সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট শিকার করেন। এছাড়া কেমার রোচ এবং কাইল মায়ার্স দুটি করে উইকেট তুলে নেন।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটাই ধীরগতির ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। মোস্তাফিজুর রহমান আর খালেদ আহমেদ জুটি গড়ে বোলিং শুরু করেন। দুই ওপেনার জন ক্যাম্পবেল এবং ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট তাদের প্রথম ৫ ওভারে এক রানও নেননি। অর্থাৎ মেইডেন যায় প্রথম ৫ ওভার।
স্বাগতিকদের প্রথম রান আসে ৩২তম বলে। মোস্তাফিজ তার প্রথম চার ওভারই নেন মেইডেন। ৫ ওভারে ৪ মেইডেনসহ ১ রান দেন তিনি। খালেদ ৫ ওভারে ৩ মেইডেনসহ দেন ৩ রান। প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ৮ রান নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৩ ওভারে নেয় ১০ রান। অবশেষে ১৪তম ওভারে এসে রান কিছুটা বাড়ে তাদের। অবশেষে ক্যাম্পবেল– ব্র্যাথওয়েটের ধীরগতির জুটিটি ভাঙেন মোস্তাফিজ।
২৬তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে দলীয় ৪৪ রানে বোল্ড হন ক্যাম্পবেল। ৭২ বলে ২৪ রান করে সাজঘরে ফিরেন তিনি। মোস্তাফিজ ধীরগতির ওপেনিং জুটি ভাঙার পর এবাদত হোসেনও পেয়েছেন উইকেটের দেখা। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে রেমন রেইফারকে (১১) ফিরিয়েছেন এবাদত। অপরাজিত ব্যাটার ব্র্যাথওয়েট (৪২) এবং বোনার (১২) ২য় দিনের খেলা শুরু করবেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম বাংলাদেশ এর স্কোরবোর্ড
বাংলাদেশ (১ম ইনিংস) – ১০৩/১০ (৩২.৫)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১ম ইনিংস) – ৯৫/২ (৪৮.০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম বাংলাদেশ ম্যাচের একাদশ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), জশুয়া দা সিলভা (উইকেট রক্ষক), জন ক্যাম্পবেল, রেমন রেইফার, এনক্রুমা বোনার, জার্মেইন ব্ল্যাকউড, কাইল মায়ার্স, আলজারি জোসেফ, গুদকেশ মতি, কেমার রোচ এবং জেডেন সিলস |
বাংলাদেশ | সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নুরুল হাসান (উইকেট রক্ষক), তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহমুদুল হাসান জয়, মুমিনুল হক, লিটন দাস, মেহেদী হাসান, খালেদ আহমেদ, এবাদত হোসেন এবং মোস্তাফিজুর রহমান। |