ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম বাংলাদেশ (দ্বিতীয় টেস্ট – ৪র্থ দিন)
হারটা নিশ্চিতই ছিল। তৃতীয় দিন শেষেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল সফরকারী বাংলাদেশের ভাগ্য। এমনকি ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কাও ছিল। তবে সেই লজ্জায় পড়তে হয়নি টাইগারদের। উইকেট রক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসানের সাহসী ব্যাটিংয়ে ইনিংস হার এড়িয়ে ১২ রানের লিড পায় বাংলাদেশ।
ফলে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ১৩ রান। এই লক্ষ্য পেরোতে মাত্র ১৭ বল লেগেছে ক্যারিবীয়দের। সেই সাথে সেন্ট লুসিয়া টেস্টে ১০ উইকেটের বড় জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রেইগ ব্রেথওয়েট ৪ আর জন ক্যাম্পবেল ৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
তৃতীয় দিন শেষেই সেন্ট লুসিয়া টেস্টে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিল সাকিব আল হাসানের দল। লক্ষ্য ছিল একটাই, কোনোমতে ইনিংস হারটা এড়ানো যায় কি না। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ইনিংস পরাজয় এড়াতে আরও ৪২ রান করতে হতো সফরকারীদের।
ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেটে ১৩২ রান। প্রথম ইনিংসে সাকিব আল হাসানের দল গুটিয়ে গিয়েছিল ২৩৪ রানে। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪০৮ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে নেয় ১৭৪ রানের লিড।
ভেজা মাঠ অনেকটা সময় বাঁচিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশের হার। চতুর্থ দিনের প্রথম দুই সেশনে আউটফিল্ড প্রস্তুতই করতে পারেননি মাঠকর্মীরা। অবশেষে চা-বিরতির পর খেলা শুরু হয়। পরাজয় এড়ানোর মিশনে ব্যাটিং করতে নামেন নুরুল (১৬) এবং মেহেদী হাসান (০)।
ক্যারিবীয় বোলাদের সামনে মাত্র ৯ ওভার টিকে থাকতে সমর্থ হয় সফরকারীরা। মেহেদী হাসান দিনের চতুর্থ ওভারেই ৪ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন। ইনিংস হার এড়াতে তখনও ২৬ রান দরকার বাংলাদেশের। শঙ্কা ছিলই। তবে নুরুল হাসান সেই শঙ্কা দূর করে দিয়েছেন।
টি-টোয়েন্টি স্টাইলে খেলে তিনি দলকে ইনিংস হারের লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছেন। ৪০ বলে তার ফিফটি পূরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বোর্ডেও লিড যোগ হয়। যদিও সেটা খুব বড় হয়নি। কিন্তু তাঁর ফলে দ্বিতীয়বার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং করতে বাধ্য হয়।
এবাদত-শরিফুল শূন্য রানে ফিরলে স্ট্রাইক নিয়ে ইনিংস হার এড়ান নুরুল। আলজারি জোসেফের এক ওভারে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে লিড ১০ রান পার করেন তিনি। শেষ ব্যাটার খালেদ আহমেদ রানআউট হলে ১৮৬ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
সঙ্গীর অভাবে নুরুল ৬ চার এবং ২ ছক্কায়, ৫০ বলে ৬০ রান করে অপরাজিত থাকেন। এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি, যেখানে সবগুলোই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে তিনি করেছেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবীয় বোলারদের মধ্যে কেমার রোচ, আলজারি জোসেফ এবং জেডেন সিলস ৩টি করে উইকেট শিকার করেন।
এর আগে অ্যান্টিগায় সিরিজের ১ম টেস্টে ৭ উইকেটে জয় পেয়েছিল স্বাগতিকরা। ফলে বাংলাদেশকে হোয়াইট ওয়াশ করে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে নিজেদের করে নিল ক্যারিবীয়রা। সেই সাথে ১ম ও ২য় টেস্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ এবং প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ নির্বাচিত হয়েছেন কাইল মায়ার্স।
আগামী ০২ জুলাই ডমিনিকা’র উইন্ডসর পার্কে এই দুই দুল তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম বাংলাদেশ এর স্কোরবোর্ড
বাংলাদেশ (১ম ইনিংস) – ২৩৪/১০ (৬৪.২)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১ম ইনিংস) – ৪০৮/১০ (১২৬.৩)
বাংলাদেশ (২য় ইনিংস) – ১৮৬/১০ (৪৫.০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২য় ইনিংস) – ১৩/০ (২.৫)
ফলাফল – ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০ উইকেটে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – কাইল মায়ার্স
প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ – কাইল মায়ার্স
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম বাংলাদেশ ম্যাচের একাদশ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), জশুয়া দা সিলভা (উইকেট রক্ষক), জন ক্যাম্পবেল, এনক্রুমা বোনার, রেমন রেইফার, জার্মেইন ব্ল্যাকউড, কাইল মায়ার্স, আলজারি জোসেফ, জেডেন সিলস, কেমার রোচ এবং অ্যান্ডারসন ফিলিপ। |
বাংলাদেশ | সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নুরুল হাসান (উইকেট রক্ষক), তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহমুদুল হাসান জয়, এনামুল হক, লিটন দাস, মেহেদী হাসান, এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ এবং শরিফুল ইসলাম। |