একজন সত্যিকারের ক্রিকেটের নেতা, দক্ষ কৌশলী এবং পরম কিংবদন্তি – ভারতীয় জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এমএস ধোনি ২০০৪ সালে উইকেট রক্ষক ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডে অভিষেকের মাধ্যমে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর ২০০৫ সালে টেস্ট এবং ২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় তাঁর। ২০০৮ সালে আইপিএল শুরু হলে চেন্নাই সুপার কিংস (সিএসকে) ফ্রাঞ্চাইজির অধিনায়ক হয়ে মাঠে নামেন এই কিংবদন্তী ক্রিকেটার।
২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছিলেন এমএস ধোনি। তখনই ইতিহাস গড়ে তাঁর নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করে ভারতীয় ক্রিকেট দল। তারপর আর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে ওয়ানডে এবং টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন তিনি। যার ফলশ্রুতি ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি’র মত শিরোপা অর্জন করতে সক্ষম হয় ভারত।
অন্যদিকে চেন্নাই সুপার কিংস ও মহেন্দ্র সিং ধোনি—একটি আরেকটির প্রায় সমার্থকই হয়ে গেছে। ২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম সিজন থেকেই সিএসকে এর নেতৃত্বে ছিলেন এমএস ধোনি। তিনি আইপিএল এবং আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, উভয়ই বিভাগেই অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আইপিএল এ এখন পর্যন্ত ধোনির নেতৃত্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার (২০১০, ২০১১, ২০১৮ এবং ২০২১) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সিএসকে ফ্রাঞ্চাইজি।
এমএস ধোনি আইপিএল জেতা সবচেয়ে বয়স্ক অধিনায়ক
গত আসরেও সবচেয়ে বয়স্ক (৪০ বছর) অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়েন ধোনি। এর আগের রেকর্ডটি অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তী স্পিনার শেন ওয়ার্নের দখলে ছিল। তিনি ৩৯ বছর বয়সে আইপিএলের উদ্বোধনী আসরে রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জয় করেছিলেন।
আইপিএলের ইতিহাসে অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেন ধোনি (৪৪৫৬)। তাঁর আগে শুধু রয়েছেন বিরাট কোহলি (৪৮৮১)। আইপিএলে, যেকোনো খেলোয়াড়ের মধ্যে ধোনি সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল (১৬১) করেছেন। এর মধ্যে ১২২টি ক্যাচ ও ৩৯টি স্টাম্পিং রয়েছে। একজন অধিনায়ক এবং উইকেট রক্ষক হিসেবে, তিনি বছরের পর বছর ধরে সিএসকে এর সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
মাঝে দুই সিজনে আইপিএল এ নিষিদ্ধ ছিল সিএসকে। ওই দুই সিজনে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসকেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ধোনি। সব মিলিয়ে আইপিএলে ২০৪টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে ধোনি, ১২১টি ম্যাচে জয় ও ৮২টি ম্যাচে পরাজয় লাভ করেন এবং ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। যেখানে তাঁর নেতৃত্বে উইনিং রেট ৫৯.৬০% যা অধিনায়ক হিসবে আইপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ২৪ টি ম্যাচ এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতকে ৭২টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন ধোনি। যেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫৯.২৮% উইনিং রেট নিয়ে তিনি ৪১টি ম্যাচে জয় এবং ২৮টি ম্যাচে পরাজরের সম্মুখীন হয়েছিলেন। এছাড়া ১টি ম্যাচ টাই এবং ২টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল। তিনি এখন পর্যন্ত একমাত্র ক্রিকেটার যিনি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সর্বোচ্চ ৩০০টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
২০১৪ সালে হুট করেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন ধোনি। তবে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সীমিত ওভারে ভারতকে নিয়মিত নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ২০২০ সালের আগস্টে এক ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন ধোনি। দুই সিজন ধরেই তাই আইপিএলে ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা রকম আলোচনা হচ্ছে। গত নভেম্বরে চেন্নাইয়ের এক অনুষ্ঠানে ধোনি বলেছিলেন অন্তত আরেকটি সিজন খেলবেন তিনি।
তবে এইবার আইপিএল এর ১৫তম আসর শুরুর পূর্বেই সিএসকে এর অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন এম এস ধোনি। তাঁর জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হয়েছে ইয়োলো আর্মির অন্যতম সৈনিক রবীন্দ্র জাদেজার। ২০১২ সাল থেকে তিনি সিএসকে এর হয়ে খেলে যাচ্ছেন এবং এই ফ্রাঞ্চাইজির তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে তিনি নেতৃত্ব দিবেন। এর আগে ধোনি ছাড়া চেন্নাইয়ের অধিনায়কত্ব করেছেন শুধু মাত্র সুরেশ রায়না।
টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচে পরাজিত হয়ে অধিনায়ক হিসেবে আইপিএল ২০২২ খুব একটা ভালো যাচ্ছে না জাদেজার। তবে ধোনি খুব ভালো ফর্মে রয়েছেন। দুই ম্যাচে তিনি দুর্দান্ত দুটি (৩৮ বলে ৫০*), (৬ বলে ১৬*) ইনিংস খেলেছেন। আগামী ০৩ এপ্রিল আইপিএল ২০২২ এর ১১তম ম্যাচে মুম্বাইয়ের ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে পাঞ্জাব কিংসের মুখোমুখি হবে সিএসকে।