ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (তৃতীয় টেস্ট)
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে শাসন করা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুশোক পালন করছে ব্রিটিশরা। এরই মধ্যে ১০ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও। থমকে গেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলাসহ সব ধরনের ক্রীড়া ইভেন্ট। তবে প্রয়াত রানির সম্মানে একদিন স্থগিত থাকার পর বাইশগজে খেলতে নেমেছিল স্টোকস-রুটরা।
কেনিংটন ওভালের সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯ উইকেটের বড় জয় দিয়ে সিরিজ শেষ করল স্বাগতিকরা। তিন টেস্টের প্রথমটি জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফিরিয়ে আনে ইংলিশরা। ওভাল টেস্টের প্রথম দিন ভেস্তে গিয়েছিল বৃষ্টিতে, দ্বিতীয় দিন স্থগিত হয় প্রয়াত রানির সম্মানে। শেষে তিন দিনে টেস্ট জিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড।
চতুর্থ দিন শেষেই নিশ্চিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার হার। সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে পঞ্চম তথা শেষ দিনে সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) ইংল্যান্ডের দরকার ছিল মাত্র ৩৩ রান। হাতে ছিল সবকটি উইকেট। এমন সহজ সমীকরণে খেলতে নেমে ইংলিশ ব্যাটাররা খরচ করেছে মাত্র ৫.৩ ওভার। মিনিটের হিসেবে সময় লেগেছে মাত্র ২৮ মিনিট। যদিও জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।
রাবাদার বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ৭৩ বলে ৩৯ করে সাজঘরে ফেরেন অ্যালেক্স লিস। তবে এক উইকেট হারালেও শেষমেশ হেসেখেলেই প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজ জিতে নেয় স্বাগতিকরা। দলের পক্ষে জ্যাক ক্রলি ৫৭ বলে ৬৯ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। এছাড়া ওলি পোপ ১০ বলে ১১ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
এর আগে তৃতীয় দিন খেলা শুরুর পর দুই দলের মিলে উইকেট পড়েছিল ১৭টি। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই বিপর্যয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওলি রবিনসন ও স্টুয়ার্ট ব্রডের বোলিংয়ের কোনো জবাবই যেন ছিল না প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের। ইংলিশ পেসারদের তোপে মাত্র ১১৮ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। দলের হয়ে মার্কো ইয়ানসেন সর্বোচ্চ ৩০ রান করেন। ইংলিশদের হয়ে রবিনসন সর্বোচ্চ ৫টি, ব্রড ৪টি এবং জেমস অ্যান্ডারসন ১টি উইকেট শিকার করেন।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংটা ভালো হয়নি ইংল্যান্ডেরও। চতুর্থ দিনের সকালে মাত্র ১৬ বলেই শেষ হয়ে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। ওলি পোপের ৬৭ রান ছাড়া আর কেউই ফিফটির দেখা পাননি। ফলে মাত্র ১৫৮ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। প্রোটিয়াদের হয়ে মার্কো ইয়ানসেন নেন ৫ উইকেট এবং ৪ উইকেট নেন কাগিসো রাবাদা। এছাড়া আনরিখ নর্কিয়া ১টি উইকেট তুলে নেন।
মাত্র ৪০ রানে পিছিয়ে থাকায় ২য় ইনিংসে স্বস্তি নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালো শুরু এনে দেন ওপেনার সারেল এরউইয়ি ও ডিন এলগার। তাদের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৫৮ রান। তবে সে স্বস্তি উবে যেতে সময় লাগেনি। আক্রমণে এসেই জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন স্টোকস। এরপর অধিনায়ক এলগারও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ।
লাঞ্চের পর তৃতীয় ওভারেই তাকে এলবিডব্লিউ করে দেন ব্রড। রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন ৬ চারে ৩৬ রান করা এই ব্যাটসম্যান। এই উইকেটের সুবাদে অস্ট্রেলিয়ান পেস বোলিং গ্রেট গ্লেন ম্যাকগ্রার ৫৬৩ উইকেটের রেকর্ড ছাড়িয়ে যান ব্রড। সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট শিকারি পেসারের তালিকায় শীর্ষে থাকা অ্যান্ডারসনের পর এখন তিনি, সব মিলিয়ে পঞ্চম। ব্রডের এখন মোট উইকেট ৫৬৬টি।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকার টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ছাড়া ২০ রানও আসেনি আর কারো ব্যাট থেকে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো দলটি শেষ ৭ উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৭৮ রানে। শেষ পর্যন্ত স্বাগতিক পেসারদের বোলিং তোপে ১৬৯ রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস।
প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় ইনিংসের ১০ উইকেট ভাগ করে নেন ইংল্যান্ডের চার পেসার। সর্বোচ্চ তিনটি করে উইকেট শিকার করেন ব্রড ও স্টোকস। দুটি করে প্রাপ্তি জেমস অ্যান্ডারসন ও ওলি রবিনসনের।
জবাব দিতে নামা ইংল্যান্ড শিবিরে প্রথম বলেই আঘাত হানতে পারত দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে লিসের ক্যাচ মিস করেন ইয়ানসেন। এরপর চতুর্থ দিনে আর তেমন কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি তারা। ফলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজও হারাতে হলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
তবে সিরিজ হারলেও বেন স্টোকসের সাথে যৌথভাবে প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ নির্বাচিত হয়েছেন কাগিসো রাবাদা। অন্যদিকে অনবদ্য বোলিং করে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন ওলি রবিনসন।
ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা এর স্কোরবোর্ড
দক্ষিণ আফ্রিকা (১ম ইনিংস) – ১১৮/১০ (৩৬.২)
ইংল্যান্ড (১ম ইনিংস) – ১৫৮/১০ (৩৬.২)
দক্ষিণ আফ্রিকা (২য় ইনিংস) – ১৬৯/১০ (৫৬.২)
ইংল্যান্ড (২য় ইনিংস) – ১৩০/১ (২২.৩)
ফলাফল – ইংল্যান্ড ৯ উইকেটে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – ওলি রবিনসন
প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ – বেন স্টোকস এবং কাগিসো রাবাদা
ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের একাদশ
ইংল্যান্ড | বেন স্টোকস (অধিনায়ক), বেন ফোকস (উইকেট রক্ষক), অ্যালেক্স লিস, ওলি পোপ, জ্যাক ক্রলি, জো রুট, স্টুয়ার্ট ব্রড, হ্যারি ব্রুক, ওলি রবিনসন, জেমস অ্যান্ডারসন এবং জ্যাক লিচ। |
দক্ষিণ আফ্রিকা | ডিন এলগার (অধিনায়ক), কাইল ভেরেইনা (উইকেট রক্ষক), সারেল এরউইয়ি, রায়ান রিকেলটন, কিগান পিটারসেন, খায়া জোন্ডো, ওয়ায়ান মুলডার, কেশব মহারাজ, মার্কো ইয়ানসেন, কাগিসো রাবাদা এবং আনরিখ নর্কিয়া। |