অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড (ম্যাচ ১৩) – হাইলাইটস
গত বছরের ১৪ নভেম্বর, দুবাইয়ের ঝলমলে রাতের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হতাশায় ডুবিয়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। এবার সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচেই সেই স্বপ্নভঙ্গের প্রতিশোধ নিলো কিউইরা। প্রতিশোধের ম্যাচে খেলতে নেমে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের দুমড়েমুচড়ে দিয়ে ৮৯ রানের বড় ব্যবধানে জয় তুলে নিলো নিউজিল্যান্ড।
শনিবার (২২ অক্টোবর) সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ডেভন কনওয়ে ও ফিন অ্যালেনের ব্যাটে ভর করে ২০০ রানের বড় পুঁজি পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের পর পুরোপুরি ব্যর্থ ব্যাটাররাও। ২০১ রানের বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১৭.১ ওভারেই মাত্র ১১১ রানে অলআউট হয়ে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি জিতে নিয়েছে ৮৯ রানের বড় ব্যবধানে। এ জয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১১ বছর পর প্রথম জয় পেল নিউজিল্যান্ড। সর্বশেষ ২০১১ সালে হোবার্ট টেস্টে জয়ের পর প্রতিবেশী দেশটির বিপক্ষে টানা ১৫ ম্যাচ জয়হীন ছিল কিউইরা।
বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ডেভিড ওয়ার্নারকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে টিম সাউদির করা প্রথম বলেই হাঁটু গেড়ে মারতে গিয়েছিলেন ওয়ার্নার। ‘ইউ মিস আই হিট’-স্ট্যাম্প উপড়ে যায় অজি ওপেনারের। ৬ বলে পাঁচ রান করে সাজঘরে ফেরেন ওয়ার্নার।
ওয়ার্নারের বিদায়ের পর মিচেল মার্শকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন অসি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। তবে চতুর্থ ওভারের শেষ বলে সাজঘরে ফেরেন ফিঞ্চও। স্যান্টনারের বলে কিউই অধিনায়কের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান ফিঞ্চ (১৩)।
পরপর দুই উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া যখন কিছুটা ব্যাকফুটে, ঠিক তখনই নিজের দ্বিতীয় শিকার তুলে নেন সাউদি। উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন মার্শ (১৬)। দুর্দান্ত ক্যাচ তালুবন্দি করে গেল আসরের ফাইনালের নায়ককে সাজঘরে পাঠান জিমি নিশাম। পাওয়ারপ্লে শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া তুলতে পারে কেবল ৩৭ রান।
তবে ১০ ওভারে ৪ উইকেটে ৬২ রানের পরও কিছুটা ভরসা হয়ে টিকেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং টিম ডেভিড। গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক হওয়া ডেভিড এরইমধ্যে একাদশের নিয়মিত মুখ, তাঁকে জায়গা দিতে গিয়ে দল থেকে বাদ পড়েছেন স্টিভেন স্মিথ। আর উইকেটকিপার ব্যাসম্যান ওয়েড তো রীতিমতো ফিনিশারই।
কিন্তু এ যাত্রায় আর ত্রাতা হতে পারেননি কেউই। মিচেল স্যান্টনারকে ছয় মারার পরের বলেই জিমি নিশামকে ক্যাচ দেন ডেভিড। আর লকি ফার্গুসনের বলে ওয়েড ক্যাচ দেন ডেভন কনওয়েকে। দলীয় ৮৯ ম্যাক্সওয়েল প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় স্বাগতিকরা। দলের পক্ষে ৩ চার ও ১ ছক্কায়, ২০ বলে সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন ম্যাক্সওয়েল।
এরপরও খেলা যে ১৭.১ বল পর্যন্ত ওভার পর্যন্ত গড়িয়েছে তাতে শুধু ব্যবধানই কমেছে। প্যাট কামিন্সকে কনওয়ের ক্যাচ বানিয়ে কিউইদের জয়ের মুহূর্তটি এনে দেন সাউদি। ২.১ ওভারে ৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। ৩১ রানে ৩ উইকেট তুলে নেন বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনার। এছাড়া দুটি উইকেট পেয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট এবং ১টি করে উইকেট নিয়েছেন ইশ সোধি ও লকি ফার্গুসন।
এর আগে প্রথম ইনিংসে দুই ওপেনার ফিন অ্যালেন এবং ডেভন কনওয়ে শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ওপর চড়াও হতে থাকেন। প্রথম চার ওভারে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৬ রান। সেখান থেকে পাওয়ারপ্লে শেষে স্কোরবোর্ডে সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬৫ রান। ততক্ষণে যদিও ফিন অ্যালেনকে হারায় কিউইরা।
জশ হ্যাজলউডকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হন ফিন। তবে প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলতে নেমেই ৫টি চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কার মারে মাত্র ১৬ বলে ৪২ রানের এক ক্যামিও ইনিংস খেলেন এ ওপেনার। ফিন অ্যালেনের আউটের পর মাত্র ৩৬ বলে ফিফটি পূরণ করেন কনওয়ে। কিউই এ ওপেনার ৭ চার ও ২ ছক্কায়, ৫৮ বলে ৯২ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন।
এছাড়া কেন উইলিয়ামসন ২৩ রান করেন। আর এক ব্যাটার জিমি নিশাম ১৩ বলে অপরাজিত ২৬ রানের ইনিংস খেলেন। অসিদেরে হয়ে জশ হ্যাজলউড সর্বাধিক ২টি এবং অ্যাডাম জাম্পা ১টি উইকেট তুলে নেন।
অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড এর স্কোরবোর্ড
নিউজিল্যান্ড – ২০০/৩ (২০.০)
অস্ট্রেলিয়া – ১১১/১০ (১৭.১)
ফলাফল – নিউজিল্যান্ড ৮৯ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – ডেভন কনওয়ে
অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচের একাদশ
অস্ট্রেলিয়া | অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ম্যাথু ওয়েড (উইকেট রক্ষক), ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মিচেল মার্শ, মার্কাস স্টয়নিস, মিচেল স্টার্ক, টিম ডেভিড, প্যাট কামিন্স, অ্যাডাম জাম্পা এবং জশ হ্যাজলউড। |
নিউজিল্যান্ড | কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), ডেভন কনওয়ে (উইকেট রক্ষক), গ্লেন ফিলিপস, ফিন অ্যালেন, মার্ক চ্যাপম্যান, মিচেল স্যান্টনার, জিমি নিশাম, টিম সাউদি, লকি ফার্গুসন, ইশ সোধি এবং ট্রেন্ট বোল্ট। |