অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (দ্বিতীয় টেস্ট)
বক্সিং ডে টেস্টে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) টেস্টের চতুর্থ দিনে অসিরা ইনিংস ও ১৮২ রানের বড় জয় পেয়েছে। এই জয়ের ফলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া।
দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৮৯ রানে অলআউট হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে ৫৭৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। ৩৮৬ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ১ উইকেটে ১৫ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ পর্যন্ত ৪র্থ দিন ৬৮.৫ ওভারে মাত্র ২০৪ রান তুলতেই গুটিয়ে যায় প্রোটিয়াদের ইনিংস।
সফরকারীদের পক্ষে টেম্বা বাভুমা সর্বোচ্চ ৬৫ রান করেন। ৩৩ রান করেন কাইল ভেরেইনা। ২৮ রান করেন থিউনিস ডি ব্রুইন। ২১ রান করেন সারেল এরউইয়ি । লুঙ্গি এনগিডি ১৯ রান করেন। নাথান লায়ন, মিচেল স্টার্ক ও স্কট বোলান্ডদের সামনে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। লায়ন ৩টি, বোলান্ড ২টি এবং প্যাট কামিন্স, স্টার্ক ও স্মিথ ১টি করে উইকেট তুলে নেন।
বড় ব্যবধানের এই জয়ে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে নিজেদের করে নিল অস্ট্রেলিয়া। সেই সাথে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের কাছাকাছি পৌঁছে গেল প্যাট কামিন্সের দল। ১৪ ম্যাচে ১৩২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া (৭৮.৫৭ শতাংশ পয়েন্ট)। সমান ম্যাচে ৯৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ভারত (৫৮.৯৩ শতাংশ পয়েন্ট)।
এর আগে প্রথম ইনিংসে বল হাতে আগুন ঝড়িয়ে ছিলেন অসি পেসার ক্যামেরুন গ্রিন। মেলবোর্ন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ডানহাতি এই পেসারের তোপে ১৮৯ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। টস জিতে প্রথমে প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় অসিরা। ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দেখেশুনে করেছিল ডিন এলগারের দল। একটা সময় ১ উইকেটে ছিল ৫৮ রান। সেখান থেকে ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে সফরকারীরা।
এমতবস্থায় দলের হাল ধরেন কাইল ভেরেইনা ও মার্কো ইয়ানসেন। ১১২ রানের জুটি গড়ে দলের বিপদ প্রায় কাটিয়েই ফেলেছিলেন তারা। কিন্তু ভেরেইনা ৬৫তম ওভারে ৫২ রান করে গ্রিনের শিকার হওয়ার পর ফের হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে প্রোটিয়াদের ইনিংস। পরের ওভারে ইয়ানসেনকেও (৫৯) তুলে নেন ডানহাতি এই পেসার। ১০ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ৬৮.৪ ওভারে ১৮৯ রানে থেমে যায় সফরকারীদের ইনিংস।
স্বাগতিকদের হয়ে ক্রিস গ্রিন মাত্র ২৭ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া মিচেল স্টার্ক ২টি এবং নাথান লায়ন ও স্কট বোলান্ড ১টি করে উইকেট তুলে নেন।
জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে ডেভিড ওয়ার্নারের ডাবল সেঞ্চুরি, অ্যালেক্স ক্যারির সেঞ্চুরি এবং তিন হাফ সেঞ্চুরির উপর ভর করে ৮ উইকেটে ৫৭৫ রানের বিশাল স্কোর সংগ্রহ করে ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। নিজের শততম টেস্ট খেলতে নেমে ১৬টি বাউন্ডারি এবং ২টি ছক্কায়, ২৫৪ বলে ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করেন ওয়ার্নার। এর আগে ক্যারিয়ারের ২৫তম সেঞ্চুরি পূরণ করতে ১৪৪ বল খেলেন তিনি।
ডাবল সেঞ্চুরি করেই আহতাবস্থায় মাঠ ছাড়লেন ডেভিড ওয়ার্নার। তার আগে বিরল এক কীর্তি গড়ে ফেলেন অস্ট্রেলিয়ান এই ওপেনার। শততম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ব্যাটার হলেন তিনি। এতদিন এই একটি আসনে এককভাবে বসে ছিলেন ইংল্যান্ডের জো রুট। যিনি প্রথম ব্যাটার হিসেবে শততম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। ডেভিড ওয়ার্নার দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন। তবে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করা ১০ম ব্যাটার হলেন ওয়ার্নার।
১৪৯ বলে ১১১ রানের ইনিংস খেলেন উইকেট রক্ষক ব্যাটার অ্যালেক্স ক্যারি। ২০১৩ সালের পর টেস্টে এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ান কোনো উইকেটরক্ষকের সেঞ্চুরি এটি। সর্বশেষ উইকেটরক্ষর ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেছিলেন ব্র্যাড হাডিন। এছাড়া স্টিভেন স্মিথ ৮৫, ট্রাভিস হেড ৫১ এবং ক্যামেরন গ্রিন করেন ৫১ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বাধিক ২টি উইকেট শিকার করেন আনরিখ নর্কিয়া। এছাড়া কাগিসো রাবাদা ২টি এবং লুঙ্গি এনগিডি ও মার্কো ইয়ানসেন ১টি করে উইকেট তুলে নেন।
ক্যারিয়ারের শততম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার। আগামী ০৪ জানুয়ারি (বুধবার) এই দুই দল সিরিজের ৩য় ও শেষ ম্যাচে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মুখোমুখি হবে।
অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা এর স্কোরবোর্ড
দক্ষিণ আফ্রিকা (১ম ইনিংস) – ১৮৯/১০ (৬৮.৪)
অস্ট্রেলিয়া (১ম ইনিংস) – ৫৭৫/৮ (ডি) (১৪৫.০)
দক্ষিণ আফ্রিকা (২য় ইনিংস) – ২০৪/১০ (৬৮.৫)
ফলাফল – অস্ট্রেলিয়া ইনিংস এবং ১৮২ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – ডেভিড ওয়ার্নার
অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের একাদশ
অস্ট্রেলিয়া | প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেট রক্ষক), ডেভিড ওয়ার্নার, মারনাস লাবুশেন, উসমান খাজা, স্টিভেন স্মিথ, ক্যামেরন গ্রিন, মিচেল স্টার্ক, ট্র্যাভিস হেড, নাথান লায়ন এবং স্কট বোলান্ড। |
দক্ষিণ আফ্রিকা |
ডিন এলগার (অধিনায়ক), কাইল ভেরেইনা (উইকেট রক্ষক), সারেল এরউইয়ি, টেম্বা বাভুমা, থিউনিস ডি ব্রুইন, খায়া জোন্ডো, মার্কো ইয়ানসেন, কাগিসো রাবাদা, কেশব মহারাজ, আনরিখ নর্কিয়া এবং লুঙ্গি এনগিডি। |